মেহেদি জামান লিজন, জাককানইবি

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার নামে অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল অংকের টাকা নেওয়া হচ্ছে। দেড় বছর আগে অ্যাম্বুলেন্স সেবা গাফিলতির অভিযোগে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের সুরাহা না হতেই এবার এ অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। সেই অ্যাম্বুলেন্স দিয়েই চলছে রমরমা বাণিজ্য!

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিনামূল্যের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে বাণিজ্য করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘অপব্যবহার’ রোধে নীতিমালার আলোকে এই চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ‘অতিরিক্ত’ চার্জের বিস্ময় প্রকাশ করেছেন উপচার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবার বিনিময়ে কোনো ধরনের চার্জ নেওয়া হয় না। ফলে জাককানইবি’তে এ সেবা পেতে টাকা পরিশোধ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ছাত্রী নাজমুন নাহার তুলি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টার ‘ব্যাথার দানে’ নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার বিভাগের একজন শিক্ষকের সুপারিশে ওই অ্যাম্বুলেন্সেই তাকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স চার্জ হিসেবে তার কাছে ৩ হাজার ৩০০ টাকার বিল পাঠান হয়। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধ না করলে জরিমানার বিধান আছে বলে তাকে জানানো হয়।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার তুলি। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সেবা যদি এইভাবে বিশাল অংকের চার্জ ধরা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে চাইবে না। তিনি বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতে না পারলে জরিমানার ব্যবস্থাও আছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সেবার দিয়ে অতিরিক্ত চার্জ ধরা এক প্রকার হয়রানি। তিনি জানান, হঠাৎ রাতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ যাতায়াত বাবদ তার কাছ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা চার্জ ধরা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিহাব শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে ময়মনসিংসের কমিউনিসি বেজড মেডিকেল কলেজ (সিবিএমসিবি) হাসপাতালে মারা যান। প্রথমে শিহাবের অবস্থার অবনতি হলে শিহাবের বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের অনুমতি চাইলে যথাসময়ে অ্যাম্বুলেন্স তারা পাইনি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে আছেন ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, কিছুদিন মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ করা হতো। পরবর্তীতে নানা সমস্যার কারণে অ্যাম্বুলেন্সকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়।

অ্যাম্বুলেন্সের ‘অতিরিক্ত’ চার্জ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের অপব্যবহার রুখতে নীতিমালার আলোকে চার্জ ধরা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. মুহাম্মদ ইমদাদুর রাশেদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিদিনের সংবাদ। ‘অতিরিক্ত’ চার্জ আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স যে নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়, সেই নীতিমালা অনুসারেই বিল এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য যা কিছু দরকার তা করা হবে। প্রয়োজনে নীতিমালা সংশোধন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close