এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১৮ আগস্ট, ২০১৯

খুলনার সর্ববৃহৎ চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট

চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি। চামড়ার দাম না থাকায় গতকাল শনিবার ঈদের পরের প্রথম হাটে এ মোকামে তুলনামূলক চামড়াও উঠেছে অনেক কম। সরকার নির্ধারিত দামও দিচ্ছেন না মালিকরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, লবণযুক্ত চামড়া রফতানির সরকারি ঘোষণার পর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এজন্য অনেকেই ঈদের পরে প্রথম হাটে বেচাকেনা থেকে বিরত থেকেছেন। এছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ায় কাক্সিক্ষত পরিমাণ চামড়া কিনতে পারেননি তারা।

গোপালগঞ্জের গোবিন্দ দাস বৃহত্তম চামড়ার মোকাম রাজারহাটে প্রায় ১ হাজার পিস গরু ও ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে বেশিরভাগ চামড়া তিনি ফেরত নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত কিন্তু চামড়ার এ রকম দরপতন আগে কখনো দেখিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে যে চামড়ার ফুট ৫০ থেকে ৬০ টাকা পড়েছে সেখানে রাজারহাটে চামড়ার ফুট বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে।

ঈদের পরদিন রাজারহাট প্রায় ক্রেতাশূন্য থাকলেও শনিবার হাট ছিল একটু ভিন্ন। এদিন এসেছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতা। তবে সেই তুলনায় চামড়ার জোগান ছিল কম। বিক্রেতারা বলছেন, সরকার চামড়া রফতানির ঘোষণা দেওয়ায় দরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা আশা করলেও এ হাটে এসে হয়েছেন আশাহত।

নড়াইলের শফি জানান, তিনি ৯০ পিস গরুর চামড়া এনেছিলেন। কিন্তু ১৪ পিস চামড়া বিক্রি করেছেন ৩০ টাকা ফুট হিসেবে। বাকি চামড়া লোকসানের আশঙ্কায় বাড়ি ফেরত নিয়ে গেছি। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার লাল দাস জানান, তিনি রাজারহাটে ৮০০ পিস গরু এবং ৩০০ পিস ছাগলের চামড়া এনেছিলেন। তিনি বলেন, আমার ব্যবসার জীবনে চামড়ার এত কম দাম আগে দেখিনি। সব মিলিয়ে যে দামে চামড়া সংগ্রহ করেছি, তার বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি না। যদি লাভই না হয় তাহলে এ ব্যবসা করব কেন।

যশোরের চামড়া ব্যাপারী শেফার্ড আহমেদ অভিযোগ করেন, ট্যানারি মালিকরা যে দামে কিনতে বলছেন বাজারে সেই দামে চামড়া মিলছে না। ফলে লোকসান গোনার শঙ্কায় তারাও। ট্যানারি মালিকরা তাদের টাকা পরিশোধ না করায় সব ব্যাপারী নগদ টাকার সংকটে রয়েছেন। খুলনার ফুলতলার সুপার ট্যানারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম নি¤œমুখী। এক ডলারে আমাদের চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই তুলনায় অধিক মূল্য পরিশোধ করছেন তারা।

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজারহাটের ব্যবসায়ীদের ২০ কোটি টাকার ওপরে পাওনা রয়েছে। মূলত নগদ টাকার সংকট এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে চামড়ার হাট জমেনি। আবার সরকারের কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণার পর বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। যে কারণে তারা চামড়া সংগ্রহে রেখেছেন। আগামী হাটে আনার জন্য। এরপরও শনিবারের হাটে কোটি টাকার চামড়ার হাতবদল হয়েছে। আশা করছি সামনের শনিবার জমজমাট হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close