মাসুম হোসেন, শাজাহানপুর (বগুড়া)

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

শাজাহানপুরে শতাধিক ইটভাটা

রাতের আঁধারে উধাও হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমির মাটি

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় পরিবশে আইন অমান্য করে রাতের আঁধারে কৃষিজমির উর্বর মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে মাটি ব্যবসায়ীদের এই দৌরাত্ম। অপরদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। অর্ধশতাধিক মাটির পয়েন্ট ও শতাধিক ইটভাটার ব্যবহৃত ুট্টাকের কবলে স্থানীয় সরকার নির্মিত সড়কগুলোরও বেহালদশা হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা দন্ডনীয় অপরাধ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রন) আইন অনুযায়ী সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা বন, অভয়ারণ্য, বাগান ও জলাভূমি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাজাহানপুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক ইটভাটা এবং অ্যাসকেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির উর্বর মাটি। এতে যেমন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি তেমনি ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলায় শতাধিক ইটভাটা এবং অর্ধশতাধিক মাটির পয়েন্ট চালু রয়েছে। খোট্টাপাড়া ও মাদলা ইউনিয়ন এবং উপজেলাধীন বগুড়া শহরের বর্ধিত ১৩নং ওয়ার্ডের সুজাবাদ এলাকায় ইটভাটার সংখ্যা বেশি। এসব ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে উপজেলার কৃষিজমির ওপরিভাগের উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে। কিছু কিছু মাটির পয়েন্ট থেকে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অ্যাসকেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটা হয়।

উপজেলার সাজাপুর গ্রামের দর্জিপাড়া, ফকিরপাড়া, আকন্দপাড়া, পন্ডিতপাড়া, খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের খোট্টাপাড়া গ্রাম থেকে দিনে ও রাতে মাটি কাটা হয়। খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালসুকা এলাকার খাউড়া ব্রীজের পাশ থেকে ও বড়চান্দাই গ্রামে কৃষিজমি থেকে রাতে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব পয়েন্ট থেকে অ্যাসকেভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।

এছাড়াও উপজেলার কামারপাড়া, গন্ডগ্রাম, চকজোড়া, বড়পাথার এলাকায় কৃষিজমি থেকে দেদারসে মাটি কাটার মহাউৎসব চলছে। উপজেলায় ছোট বড় মিলে অর্ধশতাধিক মাটির পয়েন্ট থেকে বর্তমানে ইটভাটার মাটি সংগ্রহ হচ্ছে। অনেক মাটির পয়েন্ট বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কয়েকদিন পর থেকে পুনরায় বন্ধ পয়েন্ট থেকে মাটি উত্তোলন শুরু করা হবে। এদিকে মাটি ও ইট বহনকারী ুট্টাকের কারণে স্থানীয় সরকার নির্মিত সড়কগুলোরও বেহালদশা হয়েছে। সড়কের মাঝে মাঝে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি রাস্তার কোথাও কোথাও মাটি ছাড়া কিছুই চোঁখে পড়েনা।

একাধিক উপজেলাবাসী জানিয়েছেন, অ্যাসকেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে উপজেলায়। মাটি ব্যবসায়ী ও ইটভাটার মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এসব ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত টাকা নেয়। প্রশাসন সুবিধা না পেলে অবশ্যই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতো। তারা উপজেলা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগের প্রভাষক আবু সাঈদ জানান, অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। জমির নিচস্তরের মাটি কাটার কারণে ধূলার সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধের এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে ইটভাটায় কয়লা পুড়ানোর কারণে কার্বণ ডাই অক্সাইট ও মনো অক্সাইট নির্গত হচ্ছে। এতেও শ^াসকষ্ট রুগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং জীববৈচিত্র হ্রাস পাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফুয়ারা খাতুন’র সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close