হাসান জাকির, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

কালীগঞ্জে খেজুর গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ

গুড়ের পাটালি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

প্রচলিত আছে যশোরের যশ, খেজুরের রস। যশোরের পাশ্ববর্তি জেলা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়ও খেজুর রসের জুড়ি নেই। উপজেলায় ঘ্রাণে ভরা কাঁচা খেজুড়ের রস জ্বালিয়ে উৎপাদন হওয়া গুড়ের পাটালী দেশ ব্যাপি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। আর তাই প্রতি বছর শীত মৌসুমে শুক্র ও সোমবার উপজেলায় বসে বিশাল গুড়ের হাট। এ হাটে উপজেলার গ্রামাঞ্চলগুলো থেকে প্রচুর খেজুরের গুড় ও পাটালী আমদানি হয়ে থাকে। প্রতিহাটে গাছিরা (কৃষকরা) তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালী বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এ দুইদিনে বাইরের ব্যবসায়ীরা গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে থাকে। তাই কালীগঞ্জের গুড়ের হাট বর্তমানে বাইরের মোকামীদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

কালীগঞ্জের হাটে মোকাম করতে আসা কুষ্টিয়ার শালদহ গ্রামের মহির উদ্দীন, মোতালেব মিয়াসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। এখানকার গুড়ে তাজা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। বাজারে এ গুড়ের অনেক চাহিদা রয়েছে। আমরা প্রতি শুক্র ও সোমবার কালীগঞ্জে মোকাম করতে আসি।

গুড় ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া জানান, তিনি ৪৫ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর তিনি কালীগঞ্জের হাটে গুড় কিনতে আসেন। ৮ থেকে ৯ কেজি ওজনের এক ঠিলে (হাড়ি) গুড় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় ক্রয় করেন। এখান থেকে গুড় কিনে তিনি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে কুষ্টিয়া শহরে বিক্রি করে থাকেন। ব্যবসায়ী মহির উদ্দীন বলেন, তিনি ৩৫ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে সাতমাইল, বারবাজার, ডাকবাংলা ও কালীগঞ্জে গুড় পাটালীর বড় হাট বসে। এরমধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড় ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। কালীগঞ্জ ছাড়া অন্যান্য স্থানে তেমনভাবে খেজুর গুড় উঠে না। যশোর বাঘারপাড়া থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী সঞ্জিব কুমার কুন্ডু বলেন, কালীগঞ্জের হাটে চট্টগ্রাম, বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কালীগঞ্জের হাট থেকে গুড় কিনে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। তিনি বলেন, তবে দিন দিন খেজুর গুড়-পাটালীর হাট হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই এ হাটে আগের মত গুড় উঠছে না। দুর-দুরান্তের মোকামীরা এখন আর আগের মত আসেন না। শুক্রবার হাটে ১০৮ ঠিলে (হাড়ি) গুড় কিনেছেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা তোবারক আলী ম-ল জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হাটে আসা মোকামীদের তিনি গুড় কিনে দেন। বড় বড় মোকামীরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে ড্রামে ভরে নিয়ে যান। ট্রাক, ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসব গুড় চলে যাচ্ছে ঢাকা, কুষ্টিয়া, বাঘারপাড়া, ভাঙ্গা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে।

গুড় হাটা মালিক আতিয়ার রহমান জানান, কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। এ গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে এ এলাকার উৎপাদিত গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি করা হয়। শীতে ক্রয় করা গুড় ব্যবসায়ীরা সারা বছর জুড়ে তা বিক্রি করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, ইটভাটা মালিকরা খেজুর গাছ ক্রয় করে পুড়িয়ে ফেলছেন। আবার অনেক গাছি গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মত হাটে গুড় আসছে না। তবে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনো টিকে আছে। এ গুড়ের হাট কালীগঞ্জের একটি ঐতিহ্য বলে জানালেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close