জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ০৭ অক্টোবর, ২০১৮

বাম্পার ফলন

হাতীবান্ধায় আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসি

দেশের উত্তর জনপদের সীমাস্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। পশ্চিমে তিস্তা নদী আর পূর্বে ভারতীয় সীমান্তের মাঝখানে অবস্থিত লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলা। আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই হাতীবান্ধায় আগাম জাতের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। এতে খুশি কৃষকরাও। এদিকে, আগাম জাতের ধান চাষে মঙ্গা পিড়িত এ অঞ্চলের কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।

এখন আগাম জাতের নতুন পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষক। আগাম জাতের এ ধান কৃষকের ঘরে ঘরে অগ্রহায়ন না আসতেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছে। আশ্বিনেই যেন নবান্নের সাড়া পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। ধান কাটার পর আবার সেই জমিতে আলু, শাক-সবজি আবাদের প্রস্তুুতি নিচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকরা। রোগ বালাই কম, একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ, ধানের দাম ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে উঁকি দিচ্ছে আগাম জাতের সোনালি ধান খেত। আর সেই ধান কাটতে ও মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। যাদের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে তারা জমি চাষ করে নতুন ফসলের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, আষাঢ় মাসের শুরুতেই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়। চারার বয়স ২৫দিন হলে তারপর জমিতে রোপন করা হয়। জমিতে রোপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়। আর সেই ধান ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর উদ্ভাবিত আগাম জাতের ধানগুলো হলো বিনা-৭, ব্রী-৩৩, ব্রী-৫৬, ব্রী-৬২, পূর্বাচী ও হাইব্রীড।

হাতীবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমি। আর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে গত বছর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমি। এ বছর আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে এক হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে।

হাতীবান্ধা উপজেলার আরাজী শেখ সুন্দর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছর দুই বিঘাতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর সাত বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছি। এর মধ্যে ৮০ শতক জমির ধান ইতিমধ্যে কাটা শেষ হয়ে গেছে। ৮০ শতক জমির ধান হয়েছে ৩৭ মণ।

উপজেলার পারুলিয়া চরের কৃষক একাব্বর হোসেন জানান, এই অঞ্চলে আগাম জাতের ধান আবাদ করে দিন দিন মঙ্গা কমে যাচ্ছে। ধানের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আগাম জাতের এ ধান মণ প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক মমিনুর রহমান জানান, আগাম জাতের ধানে রোগ বালাই কম। একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ করা যায়। তাছাড়া ধানের দাম ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন মানুষ আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

এ দিকে সিন্দুর্না চরের কৃষক এরশাদ হোসেন জানান, আগে আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা পিড়িত এ অঞ্চলের কৃষকদের কাজ বিহীন অলস সময় পার করতে হতো। মঙ্গার দিনে এ ধানটি কৃষকের ঘরে আনন্দ বয়ে এনেছে। ধানের ফলনও ভালো। প্রতিবিঘা জমিতে ধান ফলেছে ১১ থেকে ১২ মণ। বাজারে দামও ভালো। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। এছাড়া গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বিঘা জমি থেকে খড় বিক্রি করে পেয়েছি দুই হাজার টাকা। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা আগাম জাতের ধান উৎপাদনে কৃষককে বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আগাম জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ হয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close