এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১৫ আগস্ট, ২০১৮

ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করেনি

পুঁজি সংকটে যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় আসন্ন কোরবানি ঈদের চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত চামড়ার দাম কম মূল্য নির্ধারণ করায় অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ট্যানারি মালিকরা গত তিন বছরের পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন না। এতে অনেকটা পুঁজি সংকটে পড়েছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন কোরবানির ঈদে অর্থাভাবে আশানুরূপ চামড়া কেনা হবে না তাদের। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ভারতে পাচার হয়ে যাবে সীমান্তবর্তী যশোর জেলা ও আশপাশের এলাকার চামড়া।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। এখানে ছোট-বড় মিলে ৩ শতাধিক চামড়ার আড়ৎ রয়েছে। সারা বছরই এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হলেও কোরবানির ঈদের বাজার ধরতে অনেকটা তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গ্রাম থেকে চামড়া কিনে ব্যবসায় নেমে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। ঈদের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া না পেয়ে হতাশায় আছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহত্তর এ চামড়া হাটে ব্যবসায়ীদের ট্যানারি মালিক ও অনেক পাইকার ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত কোরবানির ঈদের বাজার থেকে এসব টাকা বকেয়া থাকলেও আজ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেননি ট্যানারি মালিকরা। সামনে কোরবানির অল্প সময় বাকি থাকলেও এখনো তারা টাকা হাতে না পাওয়ায় অনেকটা আর্থিক সঙ্কটে আছেন। এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। যা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তবে মহিষের চামড়ার দামের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

রাজারহাট চামড়া হাটের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব বলেন, প্রতি বছর সরকার চামড়ার দাম নির্ধারিত করে দিলেও সে দামে চামড়া কেনেন না ট্যানারি মালিকরা। নির্ধারিত দামে ট্যানারি মালিকরা চামড়া না কেনায় বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।

চামড়া ব্যবসায়ী গৌতম কুমার বলেন, সরকার যদি আমাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে আমরা এ বছর চামড়া কিনতে পারব। তিনি বলেন, এই কোরবানি ঈদের চামড়া যদি আমরা না কিনতে পারি; তাহলে ভারতে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, বকেয়া পরিশোধ নিয়ে ট্যানারি মালিকদের তালবাহানার কারণে চামড়া ব্যবসার ঈদের এ প্রধান মৌসুমে বড় লোকসানে পড়তে হবে এখানকার ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, চীনের বাজারে আমেরিকার ভ্যাট বাড়ানোর কারণে এর নীতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের চামড়া বাজারে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি চায়না কোম্পানি চামড়া এক্সপোর্ট বন্ধ করেছে। যে কারণে অধিকাংশ ট্যানারিগুলো চামড়া মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় সামনে কোরবানির বাজারে ট্যানারি মালিকরা কী করবে তা নিয়ে অশ্চিয়তায় রয়েছি আমরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close