জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী
নোয়াখালীর বিসিকে বন্ধ হতে চলছে শিল্পকারখানা
মিঠাপানি ও গ্যাস সংকট
শিল্পোয়নের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৬ সালে নোয়াখালী সদর উপজেলার অশ্বদিয়ায় ১৫ একর জমির ওপর যাত্রা শুরু করে বিসিক শিল্প নগরী। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা, ড্রেন ও ৬০ শতাংশ সাবসিডির মূল্যে প্লট প্রাপ্তির সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তায় এখানে প্রণীত হয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৮টি প্লট।
বিসিক সূত্র জানায়, দুই ধরনের প্লটের মধ্যে ‘এ’ সারির রয়েছে ৭৩টি। এগুলোর প্রতিটিরই আকার ৪৫০০ বর্গফুট। ‘এস’ সারির ৩৫টি প্লটের আকার তিন থেকে সাড়ে ছয় হাজার বর্গফুট। কিন্তু নতুন শিল্প কারখানার নামে প্লট বরাদ্ধ নিয়ে অনেকেই তা আর করেননি। যে কারণে অনেকের বরাদ্ধ বাতিলও করা হয়েছে। অবশ্য, বাতিল হওয়ার বিষয়টিকে দৈনন্দিন কর্ম বলেই মনে করছেন উপ-ব্যবস্থাপক দেলওয়ার হোসেন। এদিকে, প্লট মালিকেরা দাবি করেনÑ গ্যাস, পানিসহ নানা সমস্যার কারণে তারা শিল্পকারখানা করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
কারখানার মালিকেরা জানান, এখানকার শিল্পকারখানা গ্যাসের ওপর নির্ভরযোগ্য হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে দেওয়া গ্যাসের চাপ অনেকটাই নিভুনিভু। যে কারণে গ্যাস নির্ভর গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন জানান, এখানে নামমাত্র গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলেও বাস্তবে গ্যাসের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নেই। তিনি বলেন, বর্তমানেও গ্যাসভিত্তিক ২০Ñ২২টি কারাখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে হাজি প্লাস্টিক ও ফ্লাওয়ার মিল কোনোরকম সচল রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধের পর্যায়ে। ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, গ্যাসের সমস্যাটি সুরাহা করার একমাত্র ক্ষমতা রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সরকারের ‘উচ্চ পর্যায়ের’ কোনো মন্ত্রী এ নিয়ে দেন দরবার করলে হয়তো সমাধান সহজ হতো। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনের আগে প্রশাসন থেকে তাদের কাছে বিসিকের সমস্যার কথা জানতে চায়। এ সময় তারা সব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসকেরাও সম্মেলনে নিজের জেলার সমস্যার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তবে এক সময় সব সমস্যার ফাইল যেন চাপা পড়ে যায়।
সাংবাদিক মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জেলার অশ্বদিয়ায় নোয়াখালী ও বেগমগঞ্জের বিসিক এলাকায় প্লটের মালিকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার। তিনি বলেন, জেলার এসব উদ্যোমী শিল্পপতিদের সচল করা গেলে জেলার বেকারত্ব নিরসনে তারা অবদান রাখতে পারত।
এদিকে জেলার অন্যতম শিল্পপতি গোলাম জিলানী এখানে বাল্ব কারখানা করার উদ্যোগ নিয়ে কারখানা শুরু করার এক পর্যায়ে গ্যাসের অভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। আরেক শিল্পপতি জায়েদুল করিম পলাশ চৌধুরী বলেন, নানা সমস্যারভারে পুরো বিসিকটিই আক্রান্ত। এ অবস্থায় কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত।
বিসিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণাক্ত পানি ও পানিতে আয়রনজনিত কারণে অনেক কারখানার পানি উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে মিঠা পানির জন্যে এখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা অতিব জরুরি। মিঠা পানি পাওয়া দুষ্কর হলে গবেষণার মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানেও সার ও লৌহ কারখানা করারও সুযোগ রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বিসিক সূত্র আরো জানায়, বর্তমানেও এখানে ৩৪টি শিল্পকারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে। চলমান কারখানার মধ্যেও চারটি রুগ্ন কারখানা হিসেবে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া অবরাদ্ধকৃত রয়েছে তিনটি প্লট।
এদিকে জনবল সংকটের কথা জানান বিসিক কার্যালয়। কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন বলেন, জেলা কার্যালয়সহ সর্বমোট ২০-২২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১০-১২ জন। যে কারণে জেলা কর্মকর্তাদেরও অনেক সময় আঞ্চলিক কার্যালয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
অপরদিকে সুধারাম থানা পুলিশের নিয়মিত টহল না থাকায় সন্ধ্যের পর বিসিকের বিভিন্ন অলি-গলি ও আশেপাশে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসে বলেও অভিযোগ করেনে স্থানীয় কর্মীরা। তারা বলেন, সন্ধ্যের পর এখানে রীতিমতো বিভিন্ন শ্রেণির যুবকেরা আড্ডা জমায়। মাদক ব্যবসায়ীরা এ জায়গাকে নিজেদের ব্যবসা প্রসার করার কাজে নিরাপদ ও উপযুক্ত জায়গা মনে করেন বলে জানান স্থানীয়রা। এতে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করেন বিভিন্ন কারখানার কর্মরত কর্মচারীরা।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জেলার সদরের অশ্বদিয়ায় বিসিক নগরী উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত কোনো সরকার প্রধান কিংবা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ কেউ এই শিল্প নগরী পরিদর্শনে আসেননি।
"