তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি

  ০১ জুলাই, ২০১৮

তানোরে সেতু যন্ত্রণা!

ধাপে ধাপে ১২ বছরে ২০ কোটি টাকা ব্যয়

রাজশাহীর তানোরে শিব নদীর (বিলকুমারী বিল) ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, প্রায় ১ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রথমে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও দ্বিতীয়বার প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এবং তৃতীয়বারে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এভাবে প্রায় ১২ বছরে ধাপে ধাপে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ এখানো সম্পন্ন হয়নি। আবার যতটুকু হয়েছিল সেটি ভেঙে পড়েছে। ফলে সেতু যন্ত্রণা কাটছেই না।

এদিকে একের পর এক সংযোগ নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও কাজের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে ব্যয় বাড়ানোয় একদিকে সরকারের অর্থ গচ্চা যাচ্ছে অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পকেট ভারী হচ্ছে। আর এসব অর্থের মধ্যে থেকে একটি অংশ ঢুকছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার পকেটে। যে কারণে তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার অভিনয় করে এড়িয়ে যাচ্ছে এবং বার বার বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে অনিয়মের মাধ্যমে রাতের আঁধারে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের অভিযোগে রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মোস্তফা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ভালো ও শক্ত মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই নির্দেশ অমান্য করে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ করেছে বলে স্থানীয়রা জানায়। ফলে এবারো সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়েছে। সংযোগ সড়ক সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

তানোরের গোল্লাপাড়া গ্রামের আশরাফুল আলম, এমদাদুল হক, জয়দেব ভাদুড়ি ও সোহেল রানা ডন অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার নিয়ম লঙ্ঘন করে রাস্তার পাশে এবং পুকুরের নরম কাদামাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করছেন, যে কারণে এ বছরেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর ও মোহনপুর উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিব নদীর ওপর ২১৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় নির্মাণ প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এদিকে কয়েক দফায় নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০১২ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। অপর দিকে ২০১৩ সালে প্রায় দেড় কিলোমিটার (১.৪৫০ কিলোমিটার) সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। মেসার্স ফরিদ কনস্ট্রাকশন নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কার্যাদেশ পায়। কিন্তু তাদের থেকে কাজটি কিনে নেয় রাজশাহী শহরের মেসার্স ডন এন্টারপ্রাইজ। তারা কাজটি কেনার পরে দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ও তৃতীয় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ৭ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে ১২ বছরে ধাপে ধাপে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সংযোগ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ও কাদামাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় সেটি বার বার ভেঙে পড়ছে। যে কারণে দীর্ঘ ১২ বছরেও সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়নি।

জানতে চাইলে রাজশাহী এলজিইডির (তৎকালীন) নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সময়ে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় ঠিকাদারকে এসব মাটি সরিয়ে ফেলে শক্ত ও ভালো মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে তানোর এলজিইডির (তৎকালীন) সহকারী প্রকৌশলী রেজাউন নবী নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের আসলে কিছু করণীয় নেই। ঠিকাদার অনেক বড় মাপের মানুষ, তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এভাবে কাজ করছে; তারা আমাদের কোনো নির্দেশনা মানছে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের সিংহভাগ উত্তোলন করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবদুল্লাহ আল-মামুন কোনো মন্তব্য না করে সরাসরি তার কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে বলেছেন।

এ বাপারে মেসার্স ডন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দেখভালের দায়িত্বরত ম্যানেজার মুকুল বলেন, এক ঠিকাদারের কাছে থেকে কাজ নিয়ে কাজ করলে একটু এদিক-ওদিক হবে এটাকে অনিয়ম বলা উচিত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম-অনিয়ম বুঝি না, মালিক আমাকে যেভাবে নির্দেশ দেবেন আমি সেইভাবে কাজ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist