মো. আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ
অনন্য এক জন্মদিন
মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ির যোগ থাকে, যুথ বন্ধ হয়ে বাস করা তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মধ্যে তেমন কেউ থাকে না। তবু থাকেন এক মা। সমাজে একপেশে হয়ে পড়া ‘সন্তানদের’ তিনি আগলে রাখেন। তাই ভালোবেসে সবাই ডাকে ‘গুরু মা’ বলে। মানিকগঞ্জে বসবাসরত তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের এই ‘গুরু মা’ আলোমতি। জেলায় বসবাসরত ৮০ জন তৃতীয় লিঙ্গের দলনেতা তিনি। গত শনিবার রাতে এই ‘গুরু মা’র ৬০তম জন্মদিন আড়ম্বরভাবে পালন করলেন তার সন্তান ও সংস্কৃতিকর্মীরা। উদীচী জেলা সংসদ কার্যালয় চত্বর সাংস্কৃতি বিপ্লব সংঘ (সাবিস), বেসরকারি গবেষণা সংগঠন বারসিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী ও পাশা যৌথ আয়োজনে করে অনন্য জন্মদিন। আনন্দমুখর পরিবেশে কাটা হয় কেক, চলে বক্তৃতা, আপ্যায়ন, গান।
মানিকগঞ্জে পাশের জেলা ফরিদপুরে জন্ম আলোমতির। ৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার বড়। আলোমতি বলেন, ছোটবেলায় পরিবারের লোকজন যখন জানতে পরে আমি হিজড়া, তখন আমার মা-বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তারা ভেবে ছিলেন আমি বাড়িতে থাকলে অন্য দুই বোনের বিয়ে হবে না। সমাজের মানুষের ভয়ে আমার আপনজনেরাই আমাকে বের করে দেয়। তখন থেকে শুরু হয় হিজড়াদের সঙ্গে বসবাস করা। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে মানিকগঞ্জেই আছি। পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া গ্রামে আমরা ১২ জন একসঙ্গে বসবাস করি। সবাই আমাকে ভালোবেসে ‘গুরু মা’ বলে ডাকে।’ এই দলনেতা বলেন, ‘আজ আপনারা আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন তা আমি কোনোদিন কারো কাছ থেকে পাইনি। এটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি চাই আমার মতো যারা আছে তাদের ও এভাবে জন্মদিন পালন করা হোক। আর সরকারের কাছে আমার দাবি, আমরা যেন সবার মতো অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারি সেই সুযোগ করে দেন।’ পরে জন্মদিনে ‘সন্তানদের’ দেওয়া উপহার আংটি আলোমতির হাতে পরিয়ে দেন মেয়র মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিম। পরে তিনি গুরু মা’কে ৫ হাজার টাকা উপহার দেন। অনুষ্ঠানে উদীচী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, উদীচীর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপিকা ঊর্মিলা রায় প্রমুখ।
"