তরিকুল ইসলাম জেন্টু, আদমদীঘি (বগুড়া)
সান্তাহার স্টেশনের পাশে কয়েকশ অবৈধ দোকানপাট
রেল লাইনের পাশে মুড়িয়ে বাঁধা ত্রিপলে শত শত দোকান। দোকান মেললেই পুরোদস্তুর মার্কেট। বিকাল থেকে রাত অবধি চলে জমজমাট বেচাকেনা। তখন রেল লাইন চিহ্নটিও বোঝার উপায় নেই। তার উপরও বসে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট। আর ট্রেন আসার আগে লাইন্সম্যানদের বাঁশি আওয়াজে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা তারাহুড়ো করে সরে যান। তারপর ট্রেন চলে গেলে আবারো এসে বসে। এ অবস্থা সান্তাহার রেলগেটের নিত্যদিনের চিত্র। রেলের সংরক্ষিত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চললেও উচ্ছেদে নেই কার্যকর পদক্ষেপ।
সান্তাহার রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশের লাইন ঘেষে, রেলগেটের মাঝখানে লাইনের ওপর, স্বাধীনতা মঞ্চের উত্তর পাশে লোকাল ট্রেন ও আন্তঃনগর লাইনের মাঝখানে এভাবেই কয়েক মিটার এলাকা জুড়ে পুরো রেললাইন ও তার দুই পাশ দখল করে বসেছে এসব দোকানিরা। ঝুঁকি নিয়ে কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনের জানা যায়, রেল চলাচল নিবিঘœœ করার জন্য এ পর্যন্ত কয়েকদফা উচ্ছেদ অভিযান চালান হলেও এক-দুই দিনের মধ্যেই পুরনো অবস্থা দাঁড়ায়। মাঝে মাঝে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে আসলে তখন রেলের এক শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীদের খবরে হঠাৎ করেই অবৈধ স্থাপনাগুলো এক দিনের জন্য উধাও হয়। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল সকাল ১০টায় সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনে বাৎসরিক পরিদর্শনে আসেন জি আই বি আর খন্দকার শহিদুল ইসলাম। তার আগমনের কথা শুনে অবৈধ দোকানিরা নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নেয়। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ায় পর আবার গড়ে ওঠছে এসব অবৈধ স্থাপনা। এভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
স্টেশন সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এই পথে আন্তঃনগরসহ ৩২টি ট্রেন যাতায়াত করে। সান্তাহার স্টেশনের পশ্চিম পাশে থেকে শুরু করে রেলগেট, স্বাধীনতা মঞ্চের উত্তর পার্শ্বের পুরাতন কাপরের মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রেলপথ জুড়ে পুরাতন কাপড়ের বৃহৎ মার্কেট ও রেলগেটের ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকানে হাজার হাজার ক্রেতা প্রতিদিন ভিড় জমায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের রেললাইন জুড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান বসেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থায়ীভাবে খোলা থাকে এসব দোকানপাট। রেলগেটের স্বাধীনতা মঞ্চের উত্তর দিকে বাঁশের খুটি এবং ত্রিপল ও টিনের চালা তুলে রেল লাইন ঘেষে গড়ে ওঠেছে শতাধিক অবৈধ কাপড়ের দোকান। রেল বিভাগের সান্তাহার জিআরপির পুলিশ কর্মকর্তা, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, স্টেশন মাস্টারসহ বিভিন্ন বিভাগকে মাসিক চাঁদা দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করেন তারা এমন অভিযোগ উঠেছে। এসব অবৈধ স্থাপনার ফলে রেলওয়ের সিগন্যাল ব্যাহত ও ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটলেও তারা বিষয়টি নজরেই নেন না।
রেলওয়ের সান্তাহার স্টেশন মাস্টার মো. রেজাউল করিম (ডালিম) বলেন, রেল লাইনের আশপাশের জায়গা দখল করে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্থাপনার কারণে রেল চলাচলে সমস্যা হয়। তাই রেল চলাচল নির্বিঘœ রাখতে মাঝে মাঝেই উচ্ছেদ অভিযান চালান হয়। রেল কর্তৃপক্ষ বাঁধা দিলে কেউ তাতে কর্ণপাত করেছে না। তিনি আরো বলেন, রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শুরু করে সাংবাদিকসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে এসব দোকান বসান হয়, তাই কেউ কিছু বলে না।
"