আখলাক উদ্দিন মনসুর, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
দখলে বেহাল সুতাং নদী বাঁধ দিয়ে ভবন নির্মাণ
অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে মরতে বসেছে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং নদী। বাঁধ নির্মাণসহ নদী দখল করে চলছে স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা। ফলে প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে এক সময়ের খর¯্রােতা এই নদী। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টিতে নদীর আশপাশের বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধার সৃষ্টি হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা, দখল প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাওয়া নদীগুলোর মতো এই সুতাং নদীরও করুণ পরিণতি হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক বছর যাবত ড্রেজিং না করার কারণে ও ক্রমশ নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ভূমিদস্যু ক্ষমতার জোরে নদীর জায়গায় গড়ে তুলছে নানা স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানায়, ইতিমধ্যে ৭নং নূরপুর ইউনিয়নে অবস্থিত সুতাং নদীর তীরের ভূমির অধিকাংশ স্থান অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। এছাড়া পলি মাঠি পড়ে নদী ভরাট হচ্ছে। ফলে নদীর গভীরতাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সরজমিনে দেখা যায়, সুতাং বাজার সংলগ্ন সুতাং নদী তীরের ভূমির অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। এতে পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি কমে যাচ্ছে মৎস্য সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। স্থানীয়রা জানান, সুতাং নদী সংলগ্ন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অর্থের জোড়ে নদী ভরাট, নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনরাত। প্রতিকারে সংশ্লিষ্টদের অধিক নজরদারী এবং নদীর পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর সীমানা পুনরুদ্ধার করা জরুরী বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
স্থানীয় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাহিত্যিক পীরজাদা সৈয়দ গাজিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত নদী খনন না হওয়ায় পলি পড়ে দিন দিন নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া সুতাং নদী খননের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। নামকাস্তে কিছু খনন কাজও হয়েছিল, পরে আর খনন হয়নি। এ সুযোগে ভূমিদস্যুদের কবলে পড়েছে সুতাং নদী। তবে নদীর পাড় দখলমুক্ত না হলে ঐহিত্য ও পরিবেশ বিলিন হয়ে যাবে।
নূরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুখলিছুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে নদীর বাঁধের নিচ থেকে মাটি কেটে নিয়ে ভিট তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে নদীর অনেক স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে একশ্রেণির লোকেরা। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে পাড়ে মাটি দিয়ে ভরাট করে দখল করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে পাকা ঘরবাড়ি। এতে করে নদীর রূপরেখা পাল্টে যাচ্ছে। নদীর উপর এমনভাবে অত্যাচার করায় চেয়ারম্যান মুখলিছুর রহমানসহ এলাকারবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষের কাছে এর জোরালো প্রতিকার চেয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নদী সুতাং। এ নদীকে রক্ষা করতে খনন করা খুবই প্রয়োজন। সেই সাথে দখলদারদের কবল খেকে সুতাং নদীকে দখলমুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিল্পের বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
"