জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

নোয়াখালীতে ‘বীর নিবাস’ পেয়ে খুশি মুক্তিযোদ্ধারা

চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালি। পাশেই একটি পুকুর। পুকুর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন একটি পাকা ঘর। আর দশটি পাকা ঘর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। লাল সবুজ রঙে রাঙানো দেয়াল। দেয়ালজুড়ে যেন বাংলাদেশের পতাকারই প্রতিচ্ছবি। বাড়ির সামনে পাথরের নামফলকে লেখা ‘বীর নিবাস’। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এই বীর নিবাসের অবস্থান। এই বাড়ির বাসিন্দাও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম মফিজুর রাহমান।

শুধু মফিজুর রাহমানই নন, নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারকে গত চার বছরে বীর নিবাস তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আরও পাঁচটি বীর নিবাস নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি বীর নিবাস তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৮ টাকা। উপজেলা ও জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

জানা গেছে, প্রতিটি বীর নিবাসে দুটি শোয়ার ঘর, একটি ড্রয়িংরুম, একটি খাবার ঘর ও একটি রান্নাঘর রয়েছে। ঘরগুলোর আয়তন ২৫ বাই ২০ ফুট। ঘরের বাইরে একপাশে একটি গবাদিপশুর জন্য পাকা ছাউনি, হাঁস-মুরগির জন্য দুটি ঘর, একটি টিউবয়েল ও একটি শৌচাগার রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রাহমানের নাম ধরে ডাকতেই বীর নিবাস থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। বয়স তাঁর ৬৪ বছর। চুল, দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গেছে। শক্তি, সাহস ও মনোবল যে এখনো অটুট তা তাঁকে দেখেই বোঝা যায়। তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যখন হয় তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের আসামে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ফিরে এসে বিলোনিয়া, পরশুরাম এলাকায় যুদ্ধ করেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হয়। পরে বিয়ে করে সংসারী হন। চট্টগ্রামের অক্সিজেন কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকরি পান। যা বেতন পেতেন তা দিয়ে দুই ছেলে, চার মেয়ের সংসার চলত না। পৈতৃক ভিটেমাটি যা কিছু ছিল তার বেশির ভাগই বিক্রি করতে হয়েছে সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে। তাই ভালো একটি ঘরও তৈরি করা হয়ে ওঠেনি।

তিনি আরও জানান, তিনি কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি জীবনের শেষ বয়সে এতটা ভালোভাবে কাটাতে পারবেন। একটি ঘরের তার বড়ই প্রয়োজন ছিল। সেটিও পেয়েছেন বর্তমান সরকারের কল্যাণে। মাসে দশ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। গত দুই ঈদে পেয়েছেন বোনাস। এসব কল্পনাও করেননি কখনও।

বীর নিবাস পেয়েছেন একই উপজেলার নজরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদের স্ত্রী জাহানারা বেগম ও সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তফাও। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে সরকারের এই উপহার সমাজে তাঁদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।

তবে বীর নিবাস নির্মাণে ঠিকাদারদের অমনোযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার কারণে অল্প দিনেই সরকারের দেওয়া এই মূল্যবান উপহারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে মনে করে ঘর বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলো। জানতে চাইলে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেন নোয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার।

তিনি বলেন, প্রকল্পের শিডিউল অনুযায়ী মানসম্মত উপকরণ দিয়েই প্রতিটি বীর নিবাস তৈরি করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist