প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৮ জুন, ২০১৯

রাজধানীর ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ

ঢাকা শহরে রিকশায় চড়েন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। কিন্তু ঠিক কী পরিমাণ রিকশা ঢাকা শহরে চলে আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে কত মানুষের জীবিকা তা জানেন না অনেকেই। কিংবা তাদের মাসিক আয়ইবা কত? এসব বিষয় নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তর পরিসরে গবেষণা করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার রাইটস বা বিলস নামে একটি শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠান।

ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে বলে তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে ওঠে এসেছে। ওই রিকশাগুলো সাধারণত বিভিন্ন নামসর্বস্ব রাজনৈতিক সংস্থার অধীনে নিবন্ধন পেয়ে থাকে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

এ ব্যাপারে বিলসের গবেষণা পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘অনেক সময় একই রেজিস্ট্রেশনের একাধিক রিকশা দেখা যায়। মানে একই নম্বরে অনেকগুলো রিকশা। যার কারণে রেজিস্ট্রেশন দেখে রিকশার প্রকৃত সংখ্যা বের করা খুব কঠিন। তবে ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি, গ্যারেজ মালিক, সিটি করপোরেশন সবার সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হয় যে, ঢাকা ও এর আশপাশে প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে।

২৭ লাখ মানুষের জীবিকা রিকশার ওপর নির্ভরশীল : ঢাকার এসব রিকশার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২৭ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বলে গবেষণায় জানা যায়। কেননা একটি রিকশা সাধারণত দুই শিফটে চালানো হয়। একজন হয়তো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালান, আরেকজন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে রিকশার সংখ্যা যদি ১১ লাখ ধরা হয় তাহলে রিকশা চালকের সংখ্যাই দাঁড়ায় ২২ লাখে। সেইসঙ্গে, রিকশা মেরামত, রিকশার যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী, গ্যারেজ ব্যবসায়ী সব মিলিয়ে আরো কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা এই রিকশার সঙ্গে যুক্ত।

রিকশাচালকদের আয় : ঢাকার অন্যান্য শ্রমিকের তুলনায় রিকশাচালকের আয় ভালো বলে মনে করেন বিলসের পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ। জরিপে দেখা গেছে, একজন শ্রমিক যদি প্রতিদিন রিকশা চালান তাহলে মাসে ২৪ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ১৩ হাজার ৩৮২ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

রংপুর থেকে আসা মোহাম্মদ লিটন মিয়া প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। সপ্তাহে ছয় দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে তার দৈনিক আয় হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। সেই হিসাবে তার মাসিক আয় দাঁড়ায় গড়ে ১৮ হাজার টাকা। এই আয়ের পুরোটাই নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। যেদিন তাদের কোনো কাজ থাকে না, সেদিন রোজগারও নেই। ১০ বছর আগে যেখানে আয় ছিল এর অর্ধেক কিংবা তারও কম, অর্থাৎ দিনে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।

এদিকে গবেষণায় ওঠে এসেছে যে রিকশাচালকদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ রিকশাচালক অন্য কোন পেশার সুযোগ পেলেও রিকশা চালানো ছাড়তে চান না।

৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ : আয় রোজগার আগের চাইতে বাড়লেও জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে তাদের বিশ্রাম, খাবার দাবার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সংকটে ভুগতে হয় প্রকটভাবে। এছাড়া একজন রিকশাচালকের পক্ষে প্রতিদিন রিকশা চালানোও সম্ভব হয় না। কেননা এই কাজটি খুবই শ্রমসাধ্য এবং রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে তাদের রিকশা চালাতে হয়। যার একটা বড় ধরনের প্রভাব তাদের স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে বলে জানান কোহিনূর মাহমুদ।

বিলসের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার ৯৪ শতাংশ রিকশাচালকই অসুস্থ থাকেন। বিশেষ করে জ্বর-কাশি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা লেগেই থাকে। সেইসঙ্গে ৩০ শতাংশ জন্ডিসে আক্রান্ত বলে ওই জরিপে ওঠে এসেছে। তার কারণ তাদের জন্য রাস্তাঘাটে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া টয়লট সংকটেও ভুগতে হয় তাদের।

রিকশাচালক রিপন মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, তাদের বেশির ভাগ সময় ড্রেনে বা গাছপালার আড়ালে টয়লেটের কাজ সারতে হয়। এছাড়া যে কয়টা মোবাইল টয়লেট বা পাবলিক টয়লেট রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ৫ থেকে ১০ টাকা গুনতে হয় বলে তিনি জানান। বেশির ভাগ রিকশাওয়ালা তাদের দিনের খাওয়া সারেন বিভিন্ন টং দোকানে রুটি, কেক ও চা খেয়ে। যেন তারা ভাত খাওয়ার পয়সা সাশ্রয় করতে পারেন।

এখন রাস্তাঘাটে যদি তাদের কথা ভেবে সস্তায় পুষ্টিকর খাবার বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হতো, তাহলে তাদের হয়তো এতটা ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো না বলে মনে করছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে এই রিকশাচালকরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন বলে জানান কোহিনূর মাহমুদ।

এছাড়া রিকশার আকৃতি ও প্রকৃতি আমাদের দেশের গড়-পড়তা যে শ্রমিকরা আছেন তাদের জন্য আদর্শ নয় বলে তিনি মনে করেন।

কোহিনূর মাহমুদ বলেন, যে চালক লম্বা তাকে রিকশাটা নুয়ে চালাতে হয়। যিনি খাটো, তাদের দাঁড়িয়ে চালাতে হয়। আবার যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী, তারাও রিকশা চালান। কিন্তু রিকশাটা তাদের অনুযায়ী আরামদায়ক করে হয় না। যার কারণে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। এই বিষয়গুলো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া হয়।

এতে করে অনেক শ্রমিকের গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা থেকে শুরু করে তাদের কাজ করার ক্ষমতা আগের চাইতে কমে যায় বলে গবেষণায় ওঠে আসে। অর্থাৎ বেশির ভাগ শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে পারে না বলে জানান কোহিনূর মাহমুদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close