ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ কাম্য
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক এবং সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা ও মূলধন ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণ ও নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণও বাড়ছে বলে জানা গেছে। নয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৮ পরিচালকের পদ খালি রয়েছে। এসব সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং নির্দেশনাও কাজে আসছে না। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক কর্মকান্ড চলছে মন্থরগতিতে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ঘাটতি মেটাতে প্রতি অর্থবছর বাজেটে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিতে হচ্ছে সরকারকে। স্বভাবতই এসব সংকটের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে। পরিচালকের পদ খালি থাকায় নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো নিতে পারছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগহীনতাকে এসব পদ খালি রাখার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। একসঙ্গে এতটি পদে উপযুক্ত পরিচালক নিয়োগ সহসা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে, যা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি না দিয়ে তাদের দক্ষতা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগী করতে সরকার ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে যারা ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তারা বলছেন। মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকার অর্থ দিলে সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার অনুভব করবে না। তা ছাড়া সরকারকে এসব অর্থ জনগণের কাছ থেকেই আদায় করতে হবে। প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে তাই অর্থ বরাদ্দ না দেওয়াই এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, শীর্ষ পদ শূন্য থাকার বিষয়েও নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ খালি থাকলে বড় প্রকল্প গ্রহণ, ঋণ বিতরণ, আদায়সহ আর্থিক খাতের বিভিন্ন কাজ ঝুলে থাকে। দিনের পর দিন একাধিক ব্যাংকের পরিচালক পদ খালি থাকার বিষয়টিও কাম্য নয়। সমস্যার গভীরতা উপলব্ধিতে মন্ত্রণালয়ের ঘাটতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ন্যস্ত করার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার যে অভিযোগ ওঠে তা থেকে মন্ত্রণালয় নিজেদের দূরে রাখতে পারে। অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানোও সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একনিষ্ঠভাবে এসব সংকট দূর করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল চুরিসহ ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেই চলেছে। জনমনে যা অস্বস্তি ও অবিশ্বাসের জন্ম দিতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব থাকবে নেতিবাচক। এসব সমস্যা সমাধানে তাই মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্বরিত উদ্যোগ কাম্য।
"