খেলা ডেস্ক
টাইগারদের শেষ পরীক্ষা
মুশফিকুর রহিম উইকেটের সামনে-পেছনে থাকবেনÑএমন দৃশ্যের সঙ্গেই পরিচিত ক্রিকেট বিশ্ব। প্রায় দশ বছর ধরে এমনটিই হয়ে আসছে। টাইগার ভক্তকুল মুশিকে দুই ভূমিকাতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন বটে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরের দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে। কিউইদের বিপক্ষে সীমিত ওভারের ৬ ম্যাচের পাঁচটিতেই দর্শক ভূমিকায় ছিলেন মুশফিক। আসলে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি তাকে দর্শক সারিতে বসিয়ে দিয়েছিল। রাগবির দেশে তার শুরু ও শেষÑদুটোই অনেকটা একই রকম হলো।
প্রায় দুই সপ্তাহের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে ওয়েলিংটন টেস্টে সাদা পোশাকে ফিরেছেন তিনি। ফিরেই ১৫৯ রানের কলজয়ী ইনিংস উপহার দিয়েছেন দলকে। সেখানেও আবার চোটের বাধা। টিম সাউদির বাউন্সারের আঘাতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাইশ গজ ছেড়েছিলেন একবার। পরে আবার ব্যাট হাতে ফিরেছেন মুশফিক। কিন্তু গ্লাভস হাতে ফেরা হয়নি তার। দলের নিয়মিত অধিনায়কের পরিবর্তিত হিসেবে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো রেকর্ডই গড়ে ফেলেছিলেন ইমরুল কায়েস!
কদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় দেখা যাবে তৃতীয়জনকে। অতর্কিত চোট যে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে মুশি-ইমরুল দুজনকেই! আঙুলের ইনজুরিতে পড়া মুশফিকের ফিট হয়ে উঠতে অন্তত মাস খানেক সময় লাগবে। পেশিতে টান পড়া কায়েসের সুস্থ হয়ে উঠতে উঠতে কেটে যাবে দুই সপ্তাহ।
টাইগার ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ আছে আরো একটি। ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মাঠে নামতে পারছেন না ব্যাটিংস্তম্ভ মুমিনুল হকও। সব মিলিয়ে টিম বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে খর্বশক্তির দলে। যেই দলটার নেতৃত্ব আবার তামিম ইকবালের কাঁধে। তামিমের দল কি পারবে সফরের তৃতীয় কিউইওয়াশ ঠেকাতে? উত্তরটা মিলে যাবে কদিনের মধ্যেই।
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন মুশফিক। দলের প্রয়োজনে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। ব্যাটিং কিংবা কিপিংÑদুই বিভাগের একটিতে অন্তত ভূমিকা ছিল তার। ২০০৭ সালের পর বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের কোনো অংশই নন মুশফিক। আগের ম্যাচে তার দেড়শোর্ধ্ব রানের ইনিংস আক্ষেপটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ তার পরিবর্তে টেস্টে অভিষেক হবে নূরুল হাসান সোহানের। নিজের প্রিয় ফরম্যাটে এদিন মুশির সঙ্গে বেঞ্চে বসে থাকতে হবে মুমিনুল হককেও। তাই আজ থেকে আন্তর্জাতিক টেস্ট অধ্যায় শুরু হচ্ছে আরো একজনের। তিনি নাজমুল হোসেন শান্তর। তাই মুমিনুল-মুশির অনুপস্থিতিতে মিডল অর্ডারের দায়িত্বটা কাঁধে নিতে হবে দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসানকে। সফরে উদ্বোধনী জুটির জন্য তামিমও পাচ্ছেন না নিয়মিত সঙ্গী কায়েসকে। কায়েসের ইনজুরি একাদশের দরজা খুলে দিয়েছে সৌম্য সরকারের জন্য। এই ম্যাচটা সৌম্যর জন্য নিজেকে প্রমাণ করার উপলক্ষ বটে।
বাংলাদেশের মতো সমস্যায় আছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডও। তবে কিউইরা আছে মধুর সমস্যায়, টিম ম্যানেজমেন্ট কাকে রেখে কাকে খেলাবে সমস্যাটা তা নিয়ে। প্রথম টেস্টে দলের জয়ে কম বেশি প্রায় সবাই-ই অবদান রেখেছেন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন টম লাথাম, ফিরতি ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। আজ থেকে শুরু হওয়া টেস্টে তাদের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে সমর্থকেরা।
তবে টাইগারপ্রেমীদের চোখ সাকিব আল হাসানের ব্যাটের দিকেই থাকবে। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম ডবল সেঞ্চুরি করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছেন ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি। যা যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ যুগলবন্দি। এই জুটিকে ভিত বানিয়ে প্রথম ইনিংসে প্রায় ছয় শ রান করেছে টাইগাররা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ৭ উইকেটে হেরে গেছে মুশফিকের দল। তাতে রেকর্ড হয়ে দুদিক থেকেই। তবে কিউইদের কীর্তি ছাপিয়ে পাদপ্রদীপে থাকল টাইগারদের হারটাই। ১২২ বছর পর ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে প্রথম ইনিংসে প্রায় ছয় শ রান করেও কোনো দলের হেরে যাওয়ার দৃশ্য। অথচ ওয়েলিংটন টেস্টে প্রথম দশ সেশন পর্যন্ত ম্যাচের ছড়ি ছিল বাংলাদেশের হাতেই!
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, নূরুল হাসান, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শুভাশিষ রয়।
নিউজিল্যান্ড : জিত রাভাল, টম লাথাম, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেলর, হেনরি নিকোলস, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, বিজে ওয়াটলিং, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনার।
"