রুমান হাফিজ

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

উপলব্ধি

গোটা স্কুলজুড়ে মাধবীর আলাদা সুনাম রয়েছে। কেননা, পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাড়াও তার ব্যবহারে স্কুলের সবাই মুগ্ধ। ক্লাসে কারো সঙ্গে তার কোনো ধরনের মনোমালিন্য নেই। কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ-কথা কাটাকাটিতে তো নেই-ই। প্রথম হয় বলে অনেকেই হিংসা করে বিভিন্ন কথা বললেও মাধবী চুপ থাকে। হাসিমুখে এড়িয়ে যায় ওসব কথা।

নিয়মিত স্কুলে আসা ওর আরেকটা বিশেষ গুণ। এর ফলে ক্লাসের কোনো পড়াই তার বাদ যায় না। তবে মাঝেমধ্যে যারা ক্লাস ফাঁকি দেয়, তারা মাধবীর কাছ থেকে ক্লাসের পড়াগুলো জেনে নিতে পারে অনায়াসেই। আজ কী পড়া হয়েছে, কত বিষয় হয়েছে, কোন কোন বিষয়ে পরীক্ষা আছে ইত্যাদি নানা রকম প্রশ্নের শিকার হতে হয় তাকে প্রতিনিয়ত। এতে কখনো বিরক্তি প্রকাশ করে না

মাধবী। শান্তা, তাসফিয়া, সামিয়া আর মাধবী- এই চারজন খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে আড্ডা

দেওয়া, খাওয়া-দাওয়া এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়াও একসঙ্গে পড়ালেখা শেয়ার করা তাদের নিত্যদিনের কাজ। এই তো, কিছুদিন আগেও তারা চারজন ‘বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড’-এ

অংশগ্রহণ করেছে।

অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। স্যারেরা যার যার বিষয়ের সাজেশন দিয়ে দিয়েছেন। সাজেশন পেয়ে সবার ব্যস্ততা এখন পরীক্ষা নিয়ে। তাহসিন এই কয়দিন স্কুলে না আসায় সাজেশন নিতে পারেনি। এখন চিন্তা করছে, কিভাবে কী করবে। এদিকে, পরীক্ষা একেবারে নিকটে। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আরে, চিন্তা করছি কেন! মাধবীর কাছে গেলেই তো সব পাওয়া যাবে। তাড়াতাড়ি চলে যায় সে মাধবীদের বাড়িতে। গিয়ে দেখে, মাধবী খুব মনোযোগী হয়ে পড়ছে। আর পড়বে না-ই বা কেন, ওর যে প্রথম হওয়া চাই!

যাহোক, তাহসিন মাধবীর ঘরে ঢুকে তার কাছে সাজেশন চায়। মাধবী তখন কী উত্তর দেবে, বুঝতে পারে না। কারণ, কিছুক্ষণ আগে সামিয়া এসে ওর নোট করা সব সাজেশন নিয়ে গেছে। তবে খুব দ্রুত আবার ফিরিয়ে দিয়ে যাবে বলেছে। মাধবী অনেকটা বিনয়ী ভাব নিয়ে তাহসিনকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। তবে আশ্বাস দেয়, সে যেন কিছু সময় অপেক্ষা করে। সামিয়া নিয়ে এলেই তাকে দিয়ে দেবে।

মাধবীর উত্তর শুনে তাহসিনের বিশ্বাস হয়নি। তার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল। কোনো কথা না বলেই তাহসিন চলে যায়। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছিল মাধবীর ওপর। মাধবী অনেকবার ডেকেছে, যাতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। কিন্তু তাহসিন সেদিকে আর ফিরে তাকায়নি। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হয় তাদের। পরীক্ষা শেষে হাসিমুখে সামিয়া, মাধবী, শান্তা, তাসফিয়া প্রতিদিনকার মতো লাইব্রেরি ভবনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। তাহসিন তখনো বের হয়নি। খানিকটা পরে তাহসিন এসে যোগ দেয়। পরীক্ষা কেমন হয়েছে- সামিয়া জিজ্ঞেস করতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে তাহসিন। অনেক খারাপ কথা মাধবীকে উদ্দেশ করে বলতে থাকে। মাধবীর প্রতি জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সে। কিন্তু কোনোকিছু বুঝে উঠতে পারছিল না কেউই। মাধবীর সঙ্গে এমন আচরণ তো কেউ করেনি কখনো। তাহসিনের আচরণে সবাই থ হয়ে যায়। একজন আরেকজনের মুখের দিকে কেবল চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। তাহসিন চলে গেলে মাধবী পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে সবাই বুঝতে পারে, কিজন্য তাহসিন এমনটা করছিল।

আজ প্রথমবারের মতো এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মুখোমুখি হয় মাধবী, ভুল বুঝে তাহসিনের এমন আচরণে ভীষণ কষ্ট পায়। চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে আসার উপক্রম, তবুও নিজেকে সামলে নেয়।

একে একে সব পরীক্ষা শেষ হতে থাকে। কিন্তু তাহসিন মাধবীর পাশে আসা তো দূরের কথা, তার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে সামিয়া-শান্তারা বেশ কয়েকবার পুরো ঘটনা শুনিয়ে তাহসিনকে বোঝালেও সে তাতে আরো বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করে। কোনোভাবেই বুঝতে চায়নি।

পরীক্ষা শেষ। সপ্তাহব্যাপী স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। সবাই বিভিন্নভাবে কাটাচ্ছে ছুটির সময়গুলো। এদিকে তাহসিন মাধবীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। বার বার মনে পড়ছে সেই ঘটনা। ভেবে ভেবে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তার। শান্তা ও সামিয়া সেদিন পুরো ঘটনা খুলে বলছিল, এতে মাধবীর কোনো দোষ নেই। মাধবী তো বার বার ডেকেছেও তাকে। কিন্তু সে চলে আসে রাগ করে, যা তার সম্পূর্ণ ভুল ছিল। আর ভুল বুঝেই মাধবীর সঙ্গে এমন আচরণ করেছে। তাহসিন তার ভুল বুঝতে পারে। অনেকটা পাগল হয়ে যায়, কিভাবে মাধবীর কাছে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইবে।

আজ স্কুল খুলবে। সকাল সকাল রেডি হয়ে নেয় তাহসিন। সবার আগেই স্কুলে পৌঁছে যায়। লাইব্রেরি ভবনের সামনে বসে বসে ভাবছে, কিভাবে শুরু করবে; মাধবী যদি তাকে ক্ষমা না করে, তখন কী করবে ইত্যাদি নানা রকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এমন সময় এসে হাজির হয় শান্তা। তাহসিনকে দেখে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও সে ডাক দেওয়ায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। খানিকটা বিরক্তি নিয়েই তাহসিনের পাশে বসে। প্রথমেই তাহসিন তার ভুল স্বীকার করে। আর মাধবীর সঙ্গে এমনটা কিজন্য হয়েছিল, সেই বিষয়ে কথা বলতে থাকে। এরই মধ্যে মাধবী আর সামিয়া একসঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে লাইব্রেরি ভবন থেকে ডাক দেয় শান্তা। মাধবী তখন তাহসিনকে দেখে আসতে চাইছিল না এই ভয়ে, যদি আবারো খারাপ আচরণ করে! কিন্তু সামিয়ার জোরাজুরিতে আসতে বাধ্য হলো। সামনে আসা মাত্রই কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলে তাহসিন কাঁদতে শুরু করে। এতে পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় মাধবী। অবিরাম কেঁদেই চলেছে তাহসিন। মাধবী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মাধবীর কাছে ক্ষমা চায় তাহসিন। মাধবী স্বভাবসুলভ মুচকি হাসে। পাশে থাকা সামিয়া, তাসফিয়া আর শান্তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্কুলের আঙ্গিনায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist