সাজ্জাক হোসেন শিহাব

  ০৩ নভেম্বর, ২০১৮

ঠিক কথা

চারদিকে কুয়াশা পড়ছে টুপটাপ করে। সূর্যের আলো তখনো ফোটেনি। নাদির আজ স্কুলে যেতে চায় না। কিন্তু সে তার মাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারেনি। কত করে সে তার মাকে বললÑএই শীতের সকালে কম্বল মুড়িয়ে সে একটু ঘুমোবে। কিন্তু মা নাদিরের কথায় কিছুতেই রাজি হলো না। মায়ের সাফ কথাÑস্কুলে যেতে হবে। স্কুল ফাঁকি দেওয়া যাবে না। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। শীতের সকাল বলে কি কিছু থেমে থাকে! কিছুই থেমে থাকে না। ফুল ফোটা থামে না, পাখির গান থামে না। নদীর বুকে নৌকা চলাও থামে না। তবে কেন তোমার স্কুলে যাওয়া থামবে, নাদির? নাদির মায়ের কথার অবাধ্য হয় না। আজও হলো না। আজ কিছুতেই তার বিছানা ছেড়ে স্কুলে যেতে মন চাচ্ছিল না। সে মায়ের কথামতো বিছানা থেকে উঠে পড়ল। কিন্তু তার মন খারাপ হলো। মন খারাপ করেই সে সবার কাজ সারল। এরপর মুখটা কালো করে কাঁধে ব্যাগ ঝোলালো। তারপর সে স্কুলের উদ্দেশে বের হলো। বাড়ি থেকে তার স্কুল একটু দূরে। যেতে বিশ-ত্রিশ মিনিট সময় লাগে। সে কিছুদূর হেঁটে যেতেই তার চোখে কয়েকটা ফড়িং পড়ে। রাস্তার পাশে ছোট ছোট আড়ং গাছ। সেই গাছগুলোর পাতায় পাতায় তারা ওড়াউড়ি করছে। নিজেদের মধ্যে খেলা করছে। নাদির ফড়িংগুলোর কাছে যায়। যখনই নাদির একটা ফড়িং ধরতে যায়, অমনি সে ফড়িং উড়াল দিয়ে তারে দূরে চলে যায়। নাদিরের মন আরো খারাপ হয়ে যায়। ধুর, দুষ্টু ফড়িং! আমার কাছে ধরা দিলে তোর কী এমন ক্ষতি হয় শুনি! নাদির ওখান থেকে আবার হাঁটতে থাকে। অল্প হাঁটতেই সে কিছু পাখি দেখতে পায়। শালিক পাখি। রাস্তার পাশে বিদ্যুতের তারে বসে তারা কিচিরমিচির করছে। অনেকগুলো শালিক পাখি একসঙ্গে বসে আছে। তারা পাখা মেলিয়ে রোদের আশায় বসে বসে গল্প করছে। রোদ না থাকলেও তারা কত মজায় আছে! নাদির মনে মনে ভাবেÑএকটু রোদের জন্য পাখিদের এই অপেক্ষা! নাদির তাদের দেখে থেমে যায়। আর মন খুলে হাসে। তার হাসির আওয়াজ শুনে পাখিরা মুহূর্তেই উড়ে যায়। নাদিরের আবার মন খারাপ হয়ে যায়। সে ওখানে দেরি না করে আবার সামনে হাঁটতে থাকে। কিছুদূর যেতেই তার চোখে পড়ে কিছু কাঠবিড়ালি। তাদের দেখে আবার তার মন ভালো হয়ে যায়। কাঠবিড়ালি দেখতে কী সুন্দর! নাদির একা একা কথা বলে। এই তোরা আমার কাছে আয়। আমি একটু আদর করে দিই। নাদিরের এমন কথাশুনে কাঠবিড়ালিরা কাছে তো এলোই না, বরং নিমিষেই উঠে গেল গাছের চূড়ায়। নাদির শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল। তার মন আবার খারাপ হয়ে গেল। এরপর সে আবার হাঁটতে থাকল স্কুলের উদ্দেশে। কিছুদূর যেতেই একটা নদী আছে। নদীর ওপাশেই নাদিরের স্কুল। তাকে এই নদী পার হয়েই রোজ স্কুলে যেতে হয়। নাদির নদীর পাশে নৌকার জন্য দাঁড়ায়। মাঝি নৌকা নিয়ে ওপাশ থেকে আসছে। এ সময় নাদির এদিক-ওদিক তাকায়। দূরে পাখা মেলে গাংচিল উড়ছে। তার ইচ্ছে হয় তাদের ধরতে। কিন্তু উপায় তো নেই। তার তো পাখা নেই। তাই সে নিজের চোখ ওইদিক থেকে ঘুরিয়ে নেয়। এবার নাদিরের চোখ পড়ে নদীর কিনারায়। নদীর ধারঘেঁষে কিছু চ্যালা মাছ খেলা করছে। পানিতে তাদের সাদা গা চিকচিক করছে। নাদির তাদের হাত বাড়িয়ে ধরতে যায়। নিজের হাত পানিতে ডুবাতেই তারা দৌড় দেয়। মুহূর্তেই তারা দূরে যায়। নাদিরের মন আরো খারাপ হয়ে যায়। এর মধ্যে মাঝি নৌকা নিয়ে এপাশে চলে আসে। নাদির নৌকায় ওঠে। প্রতিদিন এই নৌকায় করে সে নদী পার হয়। এই একই মাঝি তাকে নদী পার করে দেয়। নাদিরের মন খারাপ দেখে মাঝি বলেÑবাবু, আজ তোমার মন খারাপ কেন? নাদির সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়Ñহবে না কেন? এই শীতের সকালে স্কুলে আসতে কার ভালো লাগে! আমার মায়ের সাফ কথাÑস্কুলে যেতে হবে। স্কুল ফাঁকি দেওয়া যাবে না। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। শীতের সকাল বলে কি কিছু থেমে থাকে! কিছুই থেমে থাকে না। ফুল ফোটা থামে না, পাখির গান থামে না। নদীর বুকে নৌকা চলাও থামে না। তবে কেন তোমার স্কুলে যাওয়া থামবে, নাদির? নাদিরের মুখে মায়ের এমন কথা শুনে মাঝি বলেÑতোমার মা তো ঠিকই বলেছে। নাদির, মাঝির দিকে তাকিয়ে বলেÑএকটু-আধটু স্কুলে না এলে কী এমন ক্ষতি হয়! এত নিয়ম ভালো লাগে না, চাচু। আজকে একটু ঘুমাতাম। মাঝি নাদিরের দিকে তাকিয়ে বলেÑতুমি আজ স্কুলে আসার পথে কী কী দেখেছো? নাদির বলেÑসবগুলো দুষ্টুকে দেখেছি। দুষ্টু ফড়িং দেখেছি, শালিক দেখেছি, কাঠবিড়ালি দেখেছি। আরো দেখেছি গাংচিল। আর সবশেষে এই নদীর চ্যালা মাছ। সবাই দুষ্টু। কেউ ধরা দেয় না। কাছেও আসে না। নাদিরের কথাশুনে মাঝি মুচকি হাসে। এরপর বলেÑতুমি কী খেয়াল করে দেখেছো, শীতের সকাল বলে কিন্তু কেউ বসে নেই। যদি তারা ঘরে বসে না থাকে। যদি সময়ের কাজ সময়ে করার চেষ্টা করে। তাহলে তুমি সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে কেন তা করতে পারবে না? মাঝির মুখে এমন কথা শুনে নাদির ভাবনায় পড়ে যায়। তাই তো! আমি কেন আলসেমি করছি? মায়ের কথা তো ঠিক আছে! মাঝি তো আমাকে ঠিকই বলছে!

সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। কিছুক্ষণ পর সে মাঝিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেÑচাচু, আপনি আমার ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এখন থেকে আমিও এমন আজব আবদার নিয়ে মন খারাপ করব না। এই বলে নাদির নৌকা থেকে নেমে পড়ে। এরপর হাসিমুখে সে স্কুলে যায়। আর মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close