মোনোয়ার হোসেন

  ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

টুকটুকির হাতি কেনা

টুকটুকি এ বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন তাদের বাসার সামনে হলুদ রঙের স্কুলবাস আসে। সে হলুদ বাসে চেপে স্কুলে যায়। শনিবার মায়ের অফিস বন্ধ। সেদিন সে স্কুলবাসে স্কুল যায় না। মায়ের সঙ্গে স্কুলে যায়। মা তাকে স্কুলে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে। স্কুলে এরই মধ্যে টুকটুকির অনেক বন্ধু হয়ে গেছে। তার বন্ধুদের ক্যাট আছে। ডগ আছে। বার্ড আছে। বন্ধুরা যখন স্কুলে আসে, তখন তাদের ক্যাট, ডগ আর বার্ডদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসে। টুকটুকি তাদের দেখে। দেখে তার খুব ভালো লাগে। গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে।

আজ শনিবার। স্কুল ছুটি শেষে মায়ের সঙ্গে বাসায় ফিরছিল টুকটুকি। হঠাৎ দেখে পথের মাঝে বড়ো জটলা। টুকটুকি জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। বাইরে তাকায়। জটলা ছাড়া চোখে আর কিছুই পড়ে না। মাকে বলে, মা কী হয়েছে?

মা বলল, শহরে হাতি আসছে ?

হাতি! হুররে! আনন্দে হাততালি দেয় টুকটুকি। গাড়ির সিটে বসে লাফায়। মায়ের কাছে বায়না ধরে, সে হাতি দেখবে। মা জানালাটা একটু ফাঁক করে দেয়। হাত উঁচিয়ে বলে, ওই দেখ কত্ত বড় হাতি আসছে! বলতে না বলতেই হাতি গাড়ির কাছে চলে আসে। জানালা ঘেঁষে দাঁড়ায়। টুকটুকি দেখে কত্ত বড়ো হাতি। হাতি নয়, যেনো একটা কালো পাহাড়। হঠাৎ হাতি শুঁড় জানালার ফাঁক দিয়ে গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। টুকটুকি খুব ভয় পায়। ভয় পায় তার মা। মা ভয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নেয়। বুকে জড়িয়ে ধরে। ড্রাইভার বলল, মেম, ভয় পাবেন না। হাতি কিছু করবে না। হাতি টাকা চায়। টাকা দিলেই চলে যাবে। মা বলল, তুমি বিশ টিকা দিয়ে দাও। ড্রাইভার হাতির শুঁড়ে টাকা গুঁজে দিল। হাতি টাকা নেয় না। হাতির পিঠে বসে আছে হাতির মালিক। গাড়িতে বসে তাকে দেখা যায় না। শুধু তার চিৎকার শোনা যায়। তিনি চিৎকার করে বলছেন, রাজা ছোটো শিশুদের খুব ভালোবাসে। সে মামণির হাতে টাকা নেবে, মেম। সোনামণিকে টাকা দিতে বলেন। রাজা কিছু করবে না। মালিক হাতিকে রাজা বলে ডাকে। এবার টুকটুকি হাতির শুঁড়ে একটা চকচকে বিশ টাকা ধরিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে হাতি টাকাটা সুন্দর করে শুঁড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে শুঁড় দিয়ে টুকটুকির মাথা বুলিয়ে দিল। তারপর গাড়ি থেকে শুঁড় বের করে নিল। তা দেখে টুকটুকি খুব খুশি হলো।

বাসায় ফিরে বাবাকে ফোন দিল টুকটুকি। হাতির কথা বলল। বলল, বাবা, আমি হাতি চাই। তুমি আজ অফিস থেকে ফেরার পথে আমার জন্য একটা হাতি নিয়ে আসবে।

বাবা বলল, হাতি!

হুম হাতি। বড় হাতি। হাতির শুঁড় যেন লম্বা হয়। ঠিক আছে, বাবা?

বাবা থতমত খেয়ে বলল, ঠিক আছে।

ঠিক আছে নয়, আনবেই কিন্তু।

আচ্ছা।

টুকটুকি ফোন রেখে দেয়।

এক ঘণ্টা পর টুকটুকি বাবাকে আবার ফোন দেয়। বাবা!

হুম।

মনে আছে তো?

আছে মা।

ঠিক আছে, হাতি আনবে কিন্তু।

টুকটুকি ফোন রেখে দেয়।

তার এক ঘণ্টা পর আরো একবার বাবাকে কল দিল।

তারপর আরো একবার।

আরো একবার।

বাবা পড়ল মহা বিপদে। এখন হাতি পাবে কোথায়?

অফিসের এক কলিগকে নিয়ে গেল বসুন্ধরা শপিংমলে। শপিংমল থেকে সুন্দর দেখে একটা রিমোট চালিত হাতি কিনল। রিমোর্টের বাটন চাপলে হাতি সুন্দর করে কান দুলায়। শুঁড় দোলায়। তারপর নাদুসনুদুস শরীর নিয়ে তিড়তিড় করে দৌড়ায়।

তখনই আবার মেয়ের ফোন।

বাবা।

হুম।

হাতি কিনেছ তো?

কিনেছি মা।

ঠিক আছে বাবা, হাতি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো।

হাতি দেখে টুকটুকি মুখ থমথমে করে। নাক টানে, গাল ফুলায়। বাবা!

হুমম ।

এটা কি কিনেছ?

হাতি।

এটা তো পুচকে হাতি। আমি বড় হাতি চাই।

বাবা পড়ল মহাবিপদে। এখন কী করা যায়? মেয়েকে কী করে বোঝানো যায়, বাজারে বড় হাতি পাওয়া যায় না। মেয়েটার যা জিদ! একবার যদি বেঁকে বসে! তবে তাকে আর পায় কে? কিছু খাবে-দাবে না। শুধু শুয়ে শুয়ে কাঁদবে। তাই বাবা একটা বুদ্ধি আঁটল।

বলল, মা, এই পুঁচকে হলো হাতির ছানা। মা হাতি গেছে বাইরে। টাকা তুলতে। টাকা তুলে তবেই ফিরবে।

সত্যি তো, বাবা।

হুমম।

আমরা তো ঘুমিয়ে পড়ব। হাতি এলে বুঝব কীভাবে ?

হাতি আসবে ধপাস ধপাস পায়ে। সবকিছু কাঁপিয়ে। ঝনঝন শব্দ তুলে ।

টুকটুকি হাতি রাখার জন্য বাবাকে ডাইনিং রুমটা ফাঁকা করে দিতে বলল ।

বলল, বাবা, হাতি ও হাতির ছানা থাকবে এই ডাইনিং রুমে ।

বাবা বলল, ঠিক আছে মা।

রাতে টুকটুকির ঘুম ভাঙল ঝনঝন শব্দ শুনে। শোকেসের থালা-বাসনগুলো ঝনঝন করে কাঁপছে। বাড়ি দুলছে। খাটের ওপর শুয়ে আছে মা। শুয়ে আছে বাবা। মা দুলছে। বাবা দুলছে। টুকটুকি বুঝতে পারে এবার হাতি আসছে। সে বাবাকে ডাকে। বাবা, বাবা! তাড়াতাড়ি ওঠো। হাতি আসছে।

মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙে বাবার। দেখে বাড়ি দুলছে। ঘরের ভেতর থাকা সবকিছুই দুলছে। শোকেসের ভেতর থালা-বাসনগুলো ঝনঝনিয়ে শব্দ তুলে নাচছে। বাবার আর বুঝতে বাকি রইল না, ভূমিকম্প হচ্ছে।

টুকটুকি বলল, বাবা, চলো তাড়াতাড়ি বাইরে যাই। হাতি বুঝি এসে গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close