আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ জুলাই, ২০২০

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লিবিয়ায় সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে রাশিয়া : যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লিবিয়ায় সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, লিবিয়ায় জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশটিতে এসব সামগ্রী সরবরাহ করছে মস্কো। সংঘাতকবলিত সির্তে শহরসহ অন্যান্য স্থানে রাশিয়ার ভাড়াটিয়া সেনাদের জন্য এসব সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানিয়েছে, রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের সরবরাহের জন্য মস্কো থেকে সামরিক কার্গো প্লেন পাঠানো হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে এর পাহাড়সম প্রমাণ মিলেছে। আফ্রিকম-এর গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গ্রেগোরি হ্যাডফিল্ড বলেন, এসব ছবিতে এ ঘটনায় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। তারা লিবিয়ায় পা রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী কমান্ডার খলিফা হাফতারকে সমর্থন দিতেই মূলত এসব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমন সময়ে রাশিয়া এ পদক্ষেপ নিল যার কদিন আগেই হাফতার বাহিনীর সমর্থনে লিবিয়ায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় মিসরের জেনারেল সিসি সরকার। রাশিয়া, মিসর, ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনী ইতোমধ্যে দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকার দখল নিতে সমর্থ হয়েছে। সেখানে নিজস্ব স্টাইলে পার্লামেন্টও স্থাপন করা হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বহিঃশক্তির সমর্থন নিয়ে ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে আসছিল হাফতার

বাহিনী। তবে লিবিয়া সরকারের আমন্ত্রণে তুরস্ক এতে যুক্ত হওয়ার পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। ক্রমেই পিছু হটতে থাকে হাফতার বাহিনী। এক পর্যায়ে মরিয়া হয়ে দেশটিতে হস্তক্ষেপের জন্য রাশিয়া, মিসর, ফ্রান্স ও আমিরাতের মতো দেশগুলোর শরণাপন্ন হন জেনারেল হাফতার। দৃশ্যত তার সে চেষ্টা সফল হয়েছে। জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্য এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close