আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ জুন, ২০২০

হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে নিবন্ধ প্রত্যাহার করল ল্যানসেট

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ ব্যবহারে কোভিড-১৯ রোগীদের উচ্চ মৃত্যুহারের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেড়েছে বলে জানানো গবেষণাপত্রটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট। যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি হয়েছিল, তার মান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় নিবন্ধটি প্রত্যাহার করার কথা বলেছে তারা।

ছয় মহাদেশের ৯৬ হাজার রোগীর তথ্য বিশ্লেষণের দাবি করে গত মাসে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে লেখকরা নতুন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল ড্রাগ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তাদের ওই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি দেশ কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ওষুধটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে নিবন্ধের লেখকরা তথ্যের উৎস এবং তা সংগ্রহের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না জানানোর পর তাদের অনুরোধেই নিবন্ধটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় ব্রিটিশ ওই মেডিকেল জার্নাল। যে কোম্পানির তথ্যের ওপর ওই গবেষণাটি দাঁড়িয়েছিল, সেই সার্জিস্ফিয়ারের কর্মীদের তথ্য পর্যালোচনা কিংবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই বলে উঠে এসেছে গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে। নিবন্ধের লেখকরা এখন বলছেন, সার্জিস্ফিয়ার স্বতন্ত্র পর্যালোচনার জন্য সব রোগীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাদেরকে সরবরাহ করেনি। যে কারণে ‘তথ্যের প্রাথমিক উৎসের সত্যতা সম্পর্কে’ তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না।

ল্যানসেটের বিবৃতিতেও বলা হয়, সার্জিস্ফিয়ার এবং গবেষণায় তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে ‘প্রশ্ন উঠেছে’। অথচ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি সার্জিস্ফিয়ারের এ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ তথ্যের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছিল।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় অখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আস্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন ছাপিয়ে ফেলার পর ল্যানসেটের মতো বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোতে ছাপা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা বা নিবন্ধগুলো ঠিকমতো যাচাই বাছাই হয় কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ বাড়ছে। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সার্জিস্ফিয়ারের ‘বিজ্ঞান সম্পাদক’ পদে যার নাম আছে, তিনি আদতে সায়েন্স-ফিকশন লেখক এবং ফ্যান্টাসি শিল্পী হিসেবে পরিচিত। কোম্পানির বিপণন বিভাগের নির্বাহী পদে থাকা কর্মকর্তা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বানানো কন্টেন্টের মডেল। গত সপ্তাহেও ওই কোম্পানির লিংকডইন পেইজে এর কর্মীসংখ্যা বলা ছিল ছয়জন, বুধবার তা ৩-এ নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ কোম্পানি নিজেদেরকে বিশ্বের ‘অন্যতম বৃহৎ ও দ্রুতগতির’ হাসপাতাল বিষয়ক তথ্যভা-ার বলে দাবি করলেও অনলাইনে সার্জিস্ফিয়ারের ‘তেমন উপস্থিতি নেই’ বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। সোমবারের আগে সার্জিস্ফিয়ারের হোমপেইজে যাওয়ার ‘গেট ইন টাচ’ লিংকে ক্লিক করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ওয়ার্ডপ্রেস টেমপ্লেটের ক্রিপ্টোকারেন্সিভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে চলে যেতেন। গার্ডিয়ান লিখেছে, কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত তাদের তথ্য কিংবা কোন পদ্ধতিতে তা সংগ্রহ করা হয়েছে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে ‘ব্যর্থ হয়েছে’। ল্যানসেট জার্নালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ওষুধের ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধটি নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা গত সপ্তাহে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারাই পরে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে (এনইজেএম) প্রকাশিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সংক্রান্ত আরেকটি নিবন্ধ নিয়ে আপত্তি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close