আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

জ্বলছে চারপাশ, দমবন্ধ শহরে ধোঁয়ায় বাজছে ফায়ার অ্যালার্ম

নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ তখন। খবরের কাগজে চোখ বোলাতেই প্রথম হেডলাইন দাবানলে ৩৫০ কোয়ালা মৃত (ক্রমশ সংখ্যাটা ২ হাজার পেরিয়েছে)। কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের সীমানায় আগুন লেগেছে, তা শুনেছিলাম। তবে সেই দাবানল এতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে তা টের পাইনি।

টের পেতে অবশ্য বেশি দিন সময় লাগল না। দুই দিনের মধ্যেই সিডনির আশপাশে আগুন লাগা শুরু হলো। তার সঙ্গে পাল্টাতে শুরু করল আকাশের রং। নিশ্বাস নিতে গেলে সবসময়ে পোড়া গন্ধ আসছে। শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় এক দিন গিয়ে দেখা গেল, অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যে নামতে পরিষ্কারভাবে সামনের গাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে ধোঁয়াশা। সে দিন বাড়ি ফিরে খেয়াল করলাম, জামা থেকে তখনো পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে।

এই কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল গতকাল সকালে। যখন ঘুম ভাঙল, খেয়াল করলাম গলা শুকিয়ে গিয়েছে। জল খেতে খেতে বাইরে তাকাতেই দেখলাম, এই গরমের মধ্যেও চারপাশটা ঢেকে গিয়েছে ঘন কুয়াশায়। বাইরে বেরোনোর সময়ে ভেজা রুমাল দিয়ে তার ওপরে মুখোশ পরে রওনা দিলাম। গত তিন থেকে চার দিনে বহু মানুষ মুখোশ পরা শুরু করে দিয়েছে। রাস্তায় চলার সময়ে রীতিমতো গলার কাছটা জমাট বেঁধে আসছিল। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বমি-বমি ভাব আর মাথা ঝিমঝিম।

এত দিনে এই প্রথমবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়ে অনলাইনে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স’ (বাতাসের গুণমানের সূচক) দেখলাম। তাতে ভয় আরো বেড়ে গেল। আমার কর্মস্থলের এলাকায় সূচক তখন ২ হাজার ২০০, যা বিপৎসীমার (২০০) ১১ গুণ! কোনো কোনো জায়গায় সেটা ২ হাজার ৫০০ পেরিয়েছে। দিল্লি-গাজিয়াবাদে এই সূচক ২২৯ থেকে ৬৮৬-এর মধ্যে রয়েছে। তার ফল আমরা সবাই দেখছি। সেখানে ২ হাজার ২০০! অথচ সরকারের তরফ থেকে কোনো সতর্কবার্তা নেই। সহকর্মীদের সঙ্গে এই সব আলোচনাই করছিলাম। হঠাৎ বেজে উঠল বিল্ডিংয়ের ফায়ার অ্যালার্ম! দমকল এসে বলল, আগুন লাগেনি। গরম বাতাস আর ধোঁয়ার ছোঁয়াতেই বেজে গেছে অ্যালার্ম। আগের দিন এ রকম ৬০০-এরও বেশি ‘ফলস অ্যালার্ম’ বেজেছে নানা জায়গায়। দমকল আবার বিল্ডিং খুলে দিয়ে গেলেও বেশিক্ষণ বসে কাজ করা গেল না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসেও দম বন্ধ হয়ে আসছে দেখে বেরিয়ে আমরা কয়েকজন শহরের অন্য প্রান্তে চলে গেলাম।

দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ কেটে যাওয়া সত্ত্বেও সরকার এই আগুন রুখতে অপারগ। বহু মানুষ ঘরছাড়া। অ্যামাজনের থেকেও বেশি জঙ্গল ইতোমধ্যে পুড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। পরিবেশের রীতিমতো বেহাল অবস্থা। উড়ানে দেরি হচ্ছে। ফেরি চলাচল বন্ধ। সমুদ্রে ভেসে আসছে ছাই। হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। এই বিপদে পড়ে জানা গেল, দমকলের সে রকম পরিকাঠামোই নেই যে, আগুন আয়ত্তে আনতে পারবে। আগামী কয়েক সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। তা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ‘ঢিমে তালে’ চলতে দেখে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পরিবেশকর্মীরা। দাবি একটাই সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আগামী দিনে পরিবেশবিরোধী কোনো আইন পাস করা যাবে না। শিশু কোলে বাবা-মায়েরাও ছিলেন আজকের মিছিলে। তারা বলেছেন, পৃথিবীটা যেন আগামী প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য হয়। তাই হাঁটছি আমরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close