আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

আন্তর্জাতিক আদালতে পাথরের মতো বসেছিলেন সু চি

রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানির প্রথম দিন ছিল গত মঙ্গলবার। এদিন আদালতে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির সামনেই রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর ভয়ংকর সব নৃশংসতার ঘটনা তুলে ধরে গাম্বিয়া। এ সময় সেখানে পাথরের মতো বসে থাকতে দেখা যায় শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বর্মি রাজনীতিককে।

আদালতে সু চি নিজেই তার দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) আন্তর্জাতিক আদালত নামেও পরিচিত। সেখানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার এ অভিযোগ এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির পক্ষে আদালতের শরণাপন্ন হয় দেশটি। শুনানিতে অংশ নিয়ে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবাকার তামবাদু বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যার প্রশ্নে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করতেই তার দেশ আইসিজেতে এই অভিযোগ এনেছে।

আবুবাকার তামবাদু বলেন, ‘সারা বিশ্ব কেন এখন নীরব দর্শক? কেন আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এটা ঘটতে দিচ্ছি? সবাই মনে করে, এখানে মিয়ানমারের বিচার হচ্ছে। আসলে এখানে বিচার চলছে আমাদের সামগ্রিক মানবিকতার।’

শুনানির প্রথম দিনে বাদীপক্ষের অভিযোগ শোনা হয়। মিয়ানমার এসব অভিযোগের জবাব দেয় গতকাল বুধবার। এরপর আজ উভয় পক্ষের মধ্যে যুক্তিতর্ক হবে। বর্মি প্রতিনিধিদলের প্রধান সু চি যুক্তি দেখাবেন যে, এ বিষয়ে বিচারের অধিকার আইসিজের নেই।

শুনানিতে বক্তব্য রাখার সময় গাম্বিয়ার নিযুক্ত একজন কৌঁসুলি অ্যান্ড্রু লোয়েনস্টিন রাখাইনের মংডু শহরে গণহারে রোহিঙ্গাদের মেরে ফেলার বেশ কয়েকটি নৃশংস বিবরণ তুলে ধরেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, যাকে টাটমাডাও

নামেও ডাকা হয়, তারা মংডু শহরের শত শত বেসামরিক রোহিঙ্গা পুরুষকে খুন এবং নারীদের ধর্ষণ করে।

আইসিজের ওয়েবসাইট থেকে লাইভ স্ট্রিম করা শুনানিতে এসব বিবরণ যখন পড়ে শোনানো হচ্ছিল তখন অং সান সু চির মুখে কোনো অভিব্যক্তি লক্ষ করা যায়নি। কখনো সোজা সামনে তাকিয়ে, কখনো মাটির দিকে তাকিয়ে তাকে বাদীপক্ষের বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।

শুনানির প্রথম দিকে গাম্বিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে, আদালতের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ লাভ করা। উদ্দেশ্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনো রয়ে গেছে, তাদের ওপর যেন কোনো ধরনের নির্যাতন না চলে, তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা গণহত্যার যেসব প্রমাণ এখনো রয়ে গেছে; মিয়ানমার যেন তা ধ্বংস করে ফেলতে না পারে; সে বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রত্যাশা করছে দেশটি।

অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজের আইনের অধ্যাপক মাইকেল বেকার বলেন, আদালত এই রায় দেবে কি দেবে না, সেটা নতুন বছরের শুরুর দিকে জানা যাবে।

তিনি বলেন, ‘এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। এই মামলাটির নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। কিন্তু এর গোড়ার দিকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরের রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ সূত্র : বিবিসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close