আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

তালিকায় থাকছে না বহু শিশুর নাম

আসামের কাছার জেলার শিলচর শহরে কয়েক দশকের পুরোনো একটা উদ্বাস্তু কলোনি রয়েছে। সেখানেই থাকে নয়নমনি দাস। তার বয়স ১৪। গতকাল শনিবার এনআরসি তালিকায় তার নাম উঠবে না নিশ্চিত। কারণ তার দীর্ঘদিন আগে প্রয়াত ঠাকুর্দা প্রসন্ন দাস রাজ্যের ভোটার তালিকায় এখনো ডিভি (সন্দেহভাজন ভোটার) বলে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন।

এনআরসি হালনাগাদ করার নিয়মানুসারে কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশি ট্রাইব্যুনালে ট্রাইব্যুনাল দ্বারা ঘোষিত বিদেশি (ডিএফ) হন, স্থানীয় নির্বাচনী আধিকারিকরা যদি কাউকে সন্দেহজনক ভোটার (ডিভি) বলে চিহ্নিত করে থাকেন, অথবা যদি কোনো ব্যক্তির মামলা বিদেশি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন (পিএফটি) থাকে, তাহলে তার বা তার যেসব উত্তরসূরিরা তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে নিজেদের দেখিয়েছেন (লিগ্যাসি) তাদের নাম এনআরসি তালিকার বাইরে থাকার কথা। এখানেই শেষ নয়। ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পর যারা জন্মেছে, তাদের বাবা বা মা’র মধ্যে যেকোনো একজনও যদি ডিএফ, ডিভি বা পিএফটি হন, তাহলে তার নাম এনআরসি তালিকায় থাকবে না।

নয়নমনি একা নয়, অল্পবয়সি বহু ছেলেমেয়ের নাম বাদ যাবে এনআরসি থেকে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে এনআরসিতে নাম না থাকলে কাউকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে না এবং বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার জন্য তারা ১২০ দিন সময় পাবেন। বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার ব্যাপারে নাবালক নাবালিকাদের ছাড় দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন এক আইনজীবী।

১৯৯৭ সালে আসামে ডি ভোটার বিভাগ প্রবর্তন করা হয়। যেসব নাগরিকরা তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারেননি তাদের ভোটার তালিকায় ডি ভোটার বলে চিহ্নিত করা হয়। বিদেশি ট্রাইব্যুনাল (এফটি) একটি আধা বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা যাতে ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনানুসারে কোনো ব্যক্তি বিদেশি কি-না সে ব্যাপারে মতামত দেওয়া হয়। ডি ভোটারদের এবং আসাম পুলিশের সীমান্ত বিভাগ যাদের নাম উল্লেখ করে, তাদের নোটিশ পাঠায় বিদেশি ট্রাইব্যুনাল।

কিন্তু নয়নমনি নাগরিকত্ব নিয়ে এসব হেঁয়ালি বোঝে না। সে নিজে, তার বাবা সঞ্জিত (৩৭), কাকা মনোজিত (২৮) এবং বোন টিনা (৯)-ও যে এনআরসি তালিকায় থাকবে না, এ ব্যাপারে সে একেবারেই অবহিত নয়। এদের সবাইকে বিদেশি ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজিরা দিতে হবে শঙ্কিত চিত্তে, দেশহীন হয়ে যাবার ভয় নিয়ে। গত বছর জুলাই মাসে প্রকাশিত খসড়া এনআরসি তালিকায় টিনার নাম ছিল না। কিন্তু সঞ্জিত, মনোজিত ও নয়নমনির নাম ছিল। ২৬ জুন যে অতিরিক্ত এনাআরসি ছুট তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে এদের সবার নাম বাদ গিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা ‘ডি ভোটারের উত্তরসূরি।’

আগে হাতে টানা গাড়ি চালাতেন, এখন ছোট একটা দোকান চালান সঞ্জিত। আমার বাবা মারা যান ২০০৫ সালে। তখন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় তার নাম ডি ভোটার হিসেবে দেখানো হয়নি। ২০১৩ সালের ভোটার তালিকায় বাবাকে ডি ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালের ভোটার তালিকাতেও বাবাকে ডি ভোটার দেখানো হয়েছে। আমি এখানকার সরকারি অফিসারদের অনেকবার বলেছি কিছু একটা করুন। কেউ কোনো কথা শোনেনি।

অল্প দূরেই থাকেন রতিশ দাস (৪৫)। তিনি বেকুব বনে রয়েছেন। রতিশ, তার স্ত্রী কল্পনা ও তাদের ছোট ছেলে, ১৪ বছরের রাজিবের নাম নেই খসড়া তালিকায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close