আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্প কেন শান্তির পথে হাঁটছেন না
‘শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সর্বোচ্চ আশা।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমের এক অনুষ্ঠানে রেকর্ড করা এক বার্তায় একথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কি সেই পথে হাঁটছেন, এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
হোয়াইট হাউস অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র্র তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই পূরণ করেছে।
ট্রাম্প ঐতিহাসিক এবং বলিষ্ঠ কিছু পদক্ষেপ নিতে পছন্দ করেন। তিনি দেখাতে চান, তার পূর্বসূরিরা যা করতে পারেননি, সেটা তিনি করছেন। তার পররাষ্ট্র নীতি এখন পর্যন্ত ভালই চলছে বলা যায়।
জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের এই পদক্ষেপের পেছনে শক্ত লবিং ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ডানপন্থী আমেরিকান ইহুদি যারা রক্ষণশীল বার্তা দেয়, তাদের একটা প্রভাব রয়েছে মি. ট্রম্পের নীতিনির্ধারকদের ওপর। খ্রিস্টান ধর্ম যারা মনেপ্রাণে পালন করেন, জেরুজালেম নিয়ে তাদের যে বক্তব্য আছে, সেই বক্তব্য আসে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কণ্ঠে। ‘তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে রাজা ডেভিডের আমলে ঈশ্বরের সিদ্ধান্তে জেরুজালেম ছিল ইসরায়েলের রাজধানী। ডালাসের ধর্ম প্রচারক রবার্ট জেফ্রিজ বাইবেল উদ্ধৃত করে আমাকে বলেছিল।’
শান্তি প্রক্রিয়া কী তাহলে এগোবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রেকর্ডকৃত বার্তায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছিলেন।
জেরুজালেমের সমস্যা সমাধানে সবপক্ষের জন্য একটা শক্ত চুক্তির কথাও তিনি তুলে ধরছিলেন।
কিন্তু হোয়াইট হাউস এখনো কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি কোন পথে সমাধান সম্ভব, যুক্তরাষ্ট্রইবা কীভাবে সমাধান চাইছে, সে ব্যাপারে হোয়াইট হাউস কিছুই বলছে না।
হোয়াইট হাউস সমাধানের উপায় তৈরি করছে বলেই বলা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক একজন মধ্যস্থতাকারী ডেভিড মিলার বলেছেন, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং তার আইনজীবী মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতা বুঝিয়ে সমাধানের উপায় বের করা যেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাদের দূতাবাস স্থানান্তর করার ফলে জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন জেরুজালেমের সীমানা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনিদের হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রেক্ষাপটে তারা এখন শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ।
তাদের পক্ষে অন্য কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার সম্ভাবনা কম।
তাহলে পরিস্থিতি কী বিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে?
গাজা সীমান্তে সহিংসতা এবং হতাহতের ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তাতে তারা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে।
হোয়াইট হাউস গাজার হামাস নেতাদের দায়ী করে বলেছে, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ?ইসরায়েলকে উসকানি দিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এদিকে ইসরায়েলে অর্থনৈতিক অবরোধের প্রেক্ষাপটে হতাশ ফিলিস্তিনিদের সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের ব্যাপারে এখন হামাস সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জঙ্গি সংগঠন হামাস এখন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে নিজেরা অবস্থান তৈরি করছে।
গত ২৫ বছর ধরে কথা চললেও জেরুজালেম নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলোও সবসময় ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে।
ফলে পরিস্থিতি এখন খারাপের দিকেই এগোচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
"