আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেভাবে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়া

আবারও কি ফিরে এলো সেই স্নায়ুযুদ্ধের যুগ? তবে স্নায়ুযুদ্ধ বলা না গেলেও তথ্যযুদ্ধ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এই তথ্যযুদ্ধ দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছিল রাশিয়া। এজন্য কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে আছে অন্যের পরিচয় চুরি করা, কয়েদির পোশাকে হিলারি ক্লিনটনের (মার্কিন নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ) মতো অন্য কাউকে দেখানো ইত্যাদি। এছাড়া হিলারিকে অবজ্ঞা করা এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারকে সহায়তা করার কথা উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুয়েলার গতকাল শুক্রবার এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন। রুশরা তথ্য যুদ্ধকে ২০১৬ এর নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে যেভাবে ব্যবহার করেছিল এই তথ্য যুদ্ধ পরিচালনা করেছে ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি নামে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। সে সময় তাদের প্রতি মাসে বাজেট ছিল প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার।

গবেষণা! গবেষণা! গবেষণা!

২০১৪ সাল রুশদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বোঝা। তারা নেভাদা, নিউ মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রাজ্যে গিয়েছিল। সেখানকার তৃণমূল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে।

অন্যের পরিচয় চুরি

২০১৬-এর গোড়ার দিকে রুশরা মার্কিনিদের সামাজিক সুরক্ষা নম্বর, স্থানীয় ঠিকানা, জন্ম তারিখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য চুরি করে। যেগুলো দিয়ে রুশরা ব্যাংক হিসাব, এমনকি পেপ্যাল অ্যাকাউন্টও খুলেছিল। এই পরিচয়গুলো রুশরা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে নানা কাজে ব্যবহার করে। এ হিসাবগুলো দৈনিক খরচ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার খরচ মেটাতে ব্যবহৃত হতো। এমনকি রুশদের আয়োজিত মিছিলের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের খরচ মেটাতেও ব্যবহৃত হতো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার

মুয়েলারের অভিযোগে আরো বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিনিদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলতে শত শত লোকজন নিয়োগ দেয়। এসব তথাকথিত বিশেষজ্ঞ ফেসবুকে অবৈধ অভিবাসন, কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলন এবং ধর্মীয় ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ খোলে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত হিলারিকে অবজ্ঞা করে ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া। এজন্য তারা ফেসবুকে নানা মিথ্যা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে। ২০১৬-এর মাঝামাঝি এসে রুশরা সংখ্যালঘুদের ভোট না দিতে উৎসাহিত করে।

আমেরিকানদের অজান্তে জড়িয়ে ফেলা

মুয়েলারের অভিযোগে আরো বলা হয়, সেসব বিশেষজ্ঞরা কেবল ভার্চুয়ালি (অনলাইন) কাজ করতেন না। তারা বাস্তবেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এজন্য তারা ম্যাট স্কিবার নামে এক ভুয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করত। যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মিছিলে খরচের জন্য টাকাও দিত। ২০১৬-এর জুনে তারা @March_for_Trump নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। এমন আরেকটি সমাবেশের আয়োজন করা হয় জুলাইয়ে।

হিলারি ও ওবামার ডামি উপস্থাপন

ট্রাম্পের সমাবেশে রুশরা অনেক মার্কিনিকে হিলারির মতো করে সাজিয়ে তাদের কয়েদির পোশাক পরিয়ে হাজির করে। সেপ্টেম্বরে বেশ কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এসব কাজে জড়িতদের টাকা দেওয়া হয়। ২৫ অক্টোবর ২০১৬-তে একটি মিছিলে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী হিলারি এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একাধিক ডামিকে (কাউকে অন্য কারো মতো করে সাজানো) কয়েদির পোশাক পরিয়ে হাজির করা হয়। রয়টার্সের সেদিনের ফাইলে এই ছবি পাওয়া গেছে।

ট্রাম্পের প্রচার দল এবং সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ

মুয়েলারের অভিযোগে আরো বলা হয়, সেসব তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা ট্রম্পের প্রচারণা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো। সেই বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন স্থানের অপরিচিত ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে যোগযোগ করে ট্রাম্পের পক্ষে সমাবেশে যোগদান করতে প্ররোচিত করে। এক্ষেত্রেও তারা ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।

হিলারি ক্লিনটনবিরোধী বিজ্ঞাপন

মুয়েলারের অভিযোগ, ২০১৬-এর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ডজন খানেক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেগুলোর বিষয় ছিল ট্রাম্পকে সমর্থন এবং হিলারিকে হেয় করা। এসব বিজ্ঞাপনের জন্য তারা পেপ্যালের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করত। ২০১৬-এর এপ্রিল মাসের এক বিজ্ঞাপনে হিলারিকে শয়তান আখ্যা দেওয়া হয়। সেই বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল #HillaryClintonFOrPrison2016

স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক সিস্টেম

রুশরা তাদের কাজকর্ম এবং পরিচয় লুকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আলাদা কম্পিউটার সার্ভার কিনেছিল। তারা এমনটা করেছিল যেন তাদের সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া পোস্টগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকেই দেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্বাসযোগ্য হয়। এছাড়া তারা শত শত ভুয়া ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ই-মেইল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকেই ব্যবহার করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist