ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৭

হাঁপানি হলে কী করবেন কী করবেন না

বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি লোক শ্বাসনালির অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। তাদের ৯০ শতাংশের বেশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পায় না এবং অনেক রোগী মারা যায়। তবে এ মৃত্যুর ৮০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা ও ডাক্তারের তদারকির মাধ্যমে যদি অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা বা হাঁপানি থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।

এ জন্য অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর প্রথমে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে জানা দরকার যে, তার কোন কোন দ্রব্যের অ্যালার্জি থেকে অ্যাজমা বা হাঁপানি শুরু হয়। এছাড়াও কিছু নিয়ম মেনে চললে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগী অনেকটা ভালো থাকবেন।

হাঁপানি রোগে আক্রান্ত অনেকেরই পশুপাখির লোমে অ্যালার্জি থাকে। এসব প্রাণী বাড়ির বাইরে রাখুন।

বিছানা করুন পেন লিনেন দিয়ে। প্রতিদিন দুইবেলা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা দরকার। রোগীর বিছানার চাদর প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে অথবা প্রতিদিন রোদে শুকাতে হবে। যেসব জিনিস থেকে ধুলা ওড়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করবেন না। এসব ঝাড়ার সময় রোগীকে ঘরের বাইরে থাকতে হবে।

কোনো ঝাঁঝালো গন্ধ যেমন মশলা ভাজার গন্ধ, মশার স্প্রে, পারফিউম যেন নাকে প্রবেশ না করে।

ধুলা, ধোঁয়া, ঠান্ডা বা কুয়াশা লাগানো চলবে না। রাস্তার ধুলা, ঘরের পুরনো ধুলা, গাড়ির ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করুন। যারা বাইক অথবা নন-এসি গাড়ি চালান তারা অবশ্যই মাস্ক পরে নেবেন।

ধূমপান বারণ : সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানির কষ্ট সাংঘাতিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। শুধু হাঁপানিই নয় ফুসফুস ও শ্বাসনালি সংক্রান্ত অনেক অসুখের অন্যতম কারণ ধূমপান।

শোয়ার ঘর রদবদল করুন : ঘর থেকে কার্পেট বের করে দিন। এগুলোতে প্রচুর ধুলা জমে। নরম চেয়ার, কুশন ও বাড়তি বালিশও বের করে দিন। এগুলোতেও ধুলা জমে। তোশক ও বালিশে বিশেষ ধুলারোধক ঢাকনা ব্যবহার করুন, তা না থাকলে অন্তত পাতলা রেক্সিনের কভার দিন।

পরিষ্কার ও খোলা হাওয়ার জন্য জানালা খোলা রাখুন! যখন বাইরে গাড়ির ধোঁয়া, ফ্যাক্টরির দূষণ, ধুলা বা ফুল ও গাছের রেণু বেশি থাকে, তখন জানালা বন্ধ রাখুন।

ব্যায়াম করুন : প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করা খুব জরুরি। তবে একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না, বেশি ব্যায়ামের জন্য যেন হাঁপানির টান না ওঠে। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো- এগুলো হাঁপানি রোগীর পক্ষে ভালো ব্যায়াম। বাচ্চাদের ব্যায়াম ও খেলাধুলার সময় সতর্ক দৃষ্টি রেখে দেখা উচিত যে, তাদের কোনো অসুবিধা বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। হলে খেলার আগে ওষুধ দিয়ে দিতে হবে।

টেনশনমুক্ত থাকতে হবে : কোনো কারণে ভয় পেলে, মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা শোক পেলেও হাঁপানির টান হতে পারে। তাই মনকে রাখতে হবে টেনশনফ্রি, শরীর ও মন শিথিল করে দেওয়া রপ্ত করতে হবে।

হাঁপানি রোগীর অনুপস্থিতিতে কয়েকটি কাজ সেরে রাখুন। ঘরদোর মুছে ভ্যাকুয়াম করে বা ঝাঁট দিয়ে রাখুন, পোকামাকড়ের জন্য স্প্রে করুন, কড়া গন্ধযুক্ত রান্নাবান্না সেরে রাখুন, ঘরে ফেরার আগে হাওয়া খেলতে দিন।

পানি : হাঁপানি চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে দিন। কারণ শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে হাঁপানির ওষুধ কাজ করে না।

খাওয়া-দাওয়া : বেশি রাতে ভরপেট খেলে টান উঠতে পারে। তাই রাতে পেট ভরে ভুলেও খাবেন না। হাঁপানি রুখতে নিয়ম করে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে খেতে হবে। অকারণে তাড়াহুড়া করা চলবে না। ঝাল মশলাদার খাবারের বদলে হালকা রান্না করা বাড়িতে খাবার খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ফ্রিজ থেকে বের করে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জিনিস খাওয়া উচিত নয়। রুম টেম্পারেচারে এলে তবেই খাবেন, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ফ্রিজের পানি প্রচন্ড গরমেও খাওয়া উচিত নয়।

ঘরের তাপমাত্রা : শীতকালে ঘর গরম রাখতে পারলে ভালো হয়।

হাঁপানির আক্রমণ শুরু হলে চটপট তা সামলাতে চেষ্টা করুন। যে জিনিস থেকে শুরু হয়েছে সেটি থেকে দূরে সরে যান। প্রয়োজনে সালবুটামল জাতীয় ওষুধের ইনহেলার ব্যবহার করুন ৫ মিনিট পরপর। শান্ত থাকুন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। প্রয়োজনে কাছের কোনো ডাক্তারের সাহায্য নিন।

আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করবেন।

তাছাড়া রোগীর চিকিৎসায় অ্যালার্জির ধরন অনুযায়ী ডাক্তার ভ্যাকসিন দিলে তা ঠিকমতো দিতে হবে। অ্যালার্জি ভ্যাকসিন আধুনিক চিকিৎসার একটা অংশ। দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে এর কোনো বিকল্প নেই। তাই ডাক্তারের নির্দেশমতো সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে ভ্যাকসিন নিতে ভুল করবেন না।

সাবেক অধ্যাপক, অ্যালার্জি বিভাগ

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist