আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ এপ্রিল, ২০২০

ইতালি-স্পেনে কমছে মৃত্যু, বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়াল

দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮১টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ২ হাজার ২৩৬। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৭৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫৭ জন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট ৩ লাখ ১১ হাজার ৫৫৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৮৮ জনের। তবে মৃতের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৬২। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ জন। মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৪৭। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ১৬৮। স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ফ্রান্সে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৯০ হাজার ৮৪৮ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরান ও চীনে মারা গেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৫২ এবং ৩ হাজার ৩৩০ জন। তবে চীনের বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপনের অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) সন্দেহ প্রকাশ করবে।’

মৃত্যু কমছে ইতালি-স্পেনে, বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে ইতালি ও স্পেনে মৃত্যু হার আগের দিনগুলোর চেয়ে কমতে দেখা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশবাসীকে সামনের ‘কঠিন দুই সপ্তাহের’ জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সুরক্ষা উপকরণ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও হাসপাতালকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেবল নিউইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার পেরিয়ে গেছে, মৃত্যুর সংখ্যা অতিক্রম করেছে সাড়ে ৩ হাজার, এ সংখ্যা ভাইরাসটি যে দেশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে সেই চীন থেকেও বেশি।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি; মৃত্যু ছাড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে মহামারি দাপিয়ে বেড়ালেও ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুহার কমার চিহ্নে আপাত স্বস্তি মিলছে।

ইতালিতে গত শনিবার ৬৮১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ। গত ২৩ মার্চের পর দেশটিতে এক দিনে এটিই সবচেয়ে কম মৃত্যু, বলছে রয়টার্স। ইতালিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা গুরুতর রোগী সংখ্যাও কমেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এদিন দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪ হাজার ৮০৫ জন শনাক্ত হয়েছে, সংখ্যাটি গত কয়েক দিনের তুলনায় একটু বেশি।

ইউরোপের এ দেশটিতেই কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। গত শনিবার পর্যন্ত ইতালিতে ১৫ হাজার ৩৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস; আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা কমছে স্পেনেও। গত শনিবার দেশটিতে ৮০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা শুক্রবার ও বৃহস্পতিবারের চেয়ে কম।

মোট আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেন ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে; মৃতের সংখ্যাও ১২ হাজার ছুঁইছুঁই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ আরো তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।

আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানির পর থাকা ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন নার্সিং হোমগুলোতে পড়ে থাকা লাশ যোগ করায় গত কয়েক দিনে দেশটিতে মৃতের সংখ্যায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।

আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যেও। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আগে থেকে অসুস্থ পাঁচ বছর বয়সি এক শিশুও আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখ-ে কোভিড-১৯ এ ৪ হাজার ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও গত কিছুদিন ধরে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছিল। গত শনিবার দেশটি করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চীনে যে আক্রান্তদের পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই হয় বিদেশফেরত, নয়তো তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত শনিবারও দেশটিতে নতুন ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে; আগের কয়েক দিনের তুলনায় এ সংখ্যা বেশি। এশিয়ার অন্যতম করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৭৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে, ৩ হাজার ৪৫২ মৃত্যু নিয়ে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়েছে দেশটি; এখানে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৭৩৬ জন।

ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সৌদি আরবে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০ জন, মৃতের সংখ্যা ২৯ এবং সুস্থ হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৪২০। ইসরায়েল আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ১৮ জন, মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৭৭ জন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেও করোনাভাইরাস তার ভয়াল থাবা নিয়ে হাজির হয়েছে। আক্রান্ত-মৃত্যু বাড়ছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায়। এদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৩ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৯১৫ জন।

ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর দেশটি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ভারতে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার। পাকিস্তানেও এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৮১৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের তথ্য দিয়েছে ডন; দেশটিতে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close