পাবনা প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে মারধর

গ্রেফতার ৪ প্রধান আসামি লাপাত্তা

পাবনায় ধর্ষণ মামলার এক সাক্ষীকে ডেকে নিয়ে ওসির সামনে সন্ত্রাসীদের মারধরের ঘটনায় আরো দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এ মারধরের ঘটনার প্রধান আসামি মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরীফের ছোট ভাই আরিফ এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ঘটনায় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার মিলিকে প্রধান করে ৩ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। পাবনা সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মঙ্গলবার রাতে পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আলিমকে মারধরের ঘটনায় মিরাজুল ইসলামকে এবং এক মাস আগে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামি ফিরোজ প্রামাণিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় চারজন গ্রেফতার হলো।

জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মো. পাঞ্জাবের ছেলে মো. ফিরোজ প্রামাণিক তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে। পরের দিন ২১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় ধর্ষকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করে ধর্ষিতা। এ সময় ধর্ষক ফিরোজসহ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে আবারও দলবদ্ধ ধর্ষণ ও মারধর করে। মৃত ভেবে ধর্ষিতার বাড়ির এলাকার ফাঁকা জায়গায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ধর্ষিতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে ২১ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় ৯ (১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন ২০০৩ আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করে।

সূত্র জানায়, মামলায় তদন্তে গিয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবক আলিমকে মুঠোফোনে গাছপাড়া মোড়ে ডেকে নেন সদর থানার ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল স্থানীয় চেয়ারম্যান শরীফের ভাই আরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী।

আহত আবদুল আলীম জানান, ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথপোকথনের পরই একটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়িভাবে লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম নীল রঙের ব্লেজার পড়া অবস্থায় ঘটনাস্থলে রয়েছেন। মারধরের সময় পুলিশের ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম ও এক সিপাহি দ্রুত বের হয়ে চলে যান।

আহত আব্দুল আলীমের মা আলেয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে জখম করেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি। পুলিশও নিরাপদ নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। পুলিশ এমন কাজ করতে পারে ভাবতেই পারছি না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার দাবি করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close