প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক ও কলকাতা প্রতিনিধি

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

আন্দোলনের ডাক মমতার * জাপান-প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল

এনআরসি-সিএবি নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত অশান্ত

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস হওয়ার আগে থেকেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মেঘালয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। বিল পাস হওয়ার পর তা আরো ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে আগুন, ভাঙচুর যেমন হয়েছে, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর খবরও এসেছে।

আসামে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঠেকাতে কারফিউ জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। তবে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী গুয়াহাটিতে গত বৃহস্পতিবার কারফিউ ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সেখানে কারফিউ অব্যাহত রয়েছে। জারি রয়েছে জরুরি অবস্থা। মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবা অধিকাংশ জায়গাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আর আসামের পর এবার মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়েও কারফিউ জারি করা হয়েছে। অস্থিরতা রুখতে মেঘালয়ের কিছু অংশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও এসএমএস সেবা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার শিলং সফর বাতিল করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একই দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফরও স্থগিত ঘোষাণা করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর সফর স্থগিত করা হয়।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ভারতের বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল কার্যারয়ের মুখপাত্র মুসলিমদের বাদ দেওয়ায় আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জানা গেছে, গতকাল শিলংয়ে কয়েক হাজার মানুষ নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথে নামেন। রাজ ভবনের কাছে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিলং ও তার আশপাশে বড় ধরনের অশান্তি ছড়ায়। শিলং থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেনাকাটার মূল জায়গা পুলিশ বাজারের দোকানপাটও বন্ধ। আর একটি ছবিতে দেখা গেছে, শহরের প্রধান সড়কে মশাল নিয়ে মিছিল করা হচ্ছে।

রাজধানী শিলং থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে উইলিয়ামনগরে নাগরিকত্ব বিলের বিরোধীরা হেনস্তা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাকে। এক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তিনি উইলিয়ামনগরে গিয়েছিলেন। এদিকে কোনো রকম গুজব না ছড়ানোর জন্য টুইট করে রাজ্যের বাসিন্দাদের অনুরোধ করেছে মেঘালয় পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার অশান্তি ঠেকানোর জন্য শিলংয়ের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছিল। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। তারপরও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এখনো বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা।

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ত্রিপুরায়ও গুলি চালিয়েছে পুলিশ। ত্রিপুরায় নেমেছে আধাসেনা। সবচেয়ে পরিস্থিতি খারাপ আসামে। সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। টানা চার দিনের বিক্ষোভের পর গতকাল সকাল থেকে শিথিল হয়েছে আসামের কারফিউ। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। প্রথমে গুয়াহাটিতে শিথিল করা হয়। তারপর শিথিল হয় ডিব্রুগড়েও।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আসামের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শিথিল হয়েছে কারফিউ। গতকাল ১০ ঘণ্টার অনশনে বসে অল আসাম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে অনশনে বসেছেন তারা। সকাল ৬টা থেকে চলছে আসুর অনশন কর্মসূচি। বিক্ষোভ ও কারফিউ জেরে কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে আটকে পড়া বিদেশি পর্যটকদের একটি দলকে উদ্ধার করেছে আসাম পুলিস। তার মধ্যে মার্কিন ও অস্ট্রেলীয় রয়েছে। পর্যটকদের উদ্ধার করে দিল্লি পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী আন্দোলনে আসামে প্রাণ গেছে পাঁচজনের। এর মধ্যে একজন নারী। পুলিশের গুলি ও লাঠিতে আহত হয়েছেন ৫০ জন বিক্ষোভকারী। তার মধ্যে ২৫ জন গুয়াহাটির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শিলং সফর বাতিল করলেন অমিত শাহ

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে উত্তাল মেঘালয়। এমন পরিস্থিতিতে শিলং সফর বাতিল করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামীকাল রোববার নর্থ-ইস্ট পুলিশ একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার।

সংসদের উভয় কক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুই কক্ষেই বিরোধীদের সব আক্রমণ সামলেছেন তিনি। পাল্টা জবাবও দিয়েছেন তিনিই। কিন্তু এবার সেই সিএবি ঘিরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল মেঘালয় সফর বাতিল করতে হলো সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই।

একই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশে একটি উৎসবে যোগ দেওয়ার কর্মসূচিও ছিল তার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গোটা অঞ্চলে (উত্তর-পূর্ব ভারত) উগ্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। সে কারণেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অরুণাচল সফর বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর সফর বাতিল করা হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফরও স্থগিত হয়েছে গতকাল।

আবের সফর বাতিল, বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় মমতা

এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঘিরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্তেজনার জেরে স্থগিত হয়ে গেছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফর। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে এই সফর স্থগিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেছেন, দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সফর স্থগিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের সুযোগ মতো ফের নয়া দিনক্ষণ স্থির হবে। আগামীকাল থেকে তিন দিনের ভারত সফরে আসার কথা ছিল শিনজো আবের।

এদিকে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) নিয়ে পথে নামছে তৃণমূল। যার জেরে আগামী সোমবার গণআন্দোলেনের ডাক দিয়ে বিরাট বিক্ষোভ-মিছিল কর্মসূচি দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে এই মিছিলে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। আগামী সোমবার দুপুর ১টায় আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হবে, যা শেষ হবে জোড়াসাঁকোতে। আগামী মঙ্গলবার মিছিল হবে দক্ষিণ কলকাতায়। আগামী বুধবার জেলায় জেলায় হবে মিছিল। এর আগে ২০ ডিসেম্বর এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিঘায় শিল্প সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেছেন, শুরু থেকেই এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করছে তৃণমূল সরকার, আগামী দিনেও তা করবে। ফের একবার কেন্দ্রকে হুশিয়ারি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করতে তিনি এবং তার দল দেবেন না। রাজ্যের মানুষকে মমতা বলেছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই, যেমন শান্তিতে আছেন তেমনই থাকবেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, স্বাধীনতা আন্দোলন করে যে অধিকার পাওয়া গেছে তা বজায় থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশরক্ষা করতে যদি আরেকটা স্বাধীনতা আন্দোলন করতে হয় তা তিনি করবেন। এরপরই তিনি বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আগামী ১৭ তারিখ দিল্লি সফর বাতিল করছেন। এই পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি মানুষের পাশে থাকতে চান, তাই দিল্লি যাবেন না। মমতা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এপার বাংলার সম্পর্ক ভালো। তিনি একেবারেই মৌলবাদী নন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাবের জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে জাপানের প্রধানমন্ত্রীও নিজের সফর বাতিল করেছেন। তিনি বলেছেন, মাথা ঠা-া করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নিপীড়িত, বঞ্চিতদের হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই মনে রাখুন। এরপরই মমতা আগামী সোমবার মিছিলের ডাক দেন।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় মোদি সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্রের

সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় মোদি সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আপাত দৃষ্টিতে মার্কিন সরকারের এই মন্তব্য আর্জি মনে হলেও, ভারতের উদ্দেশে তা কড়া বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঘিরে কী কী ঘটছে, সে দিকে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সবার সমান অধিকারই দুই গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি। ভারতের কাছে মার্কিন সরকারের আর্জি, সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে তারা যেন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে।

সিএবির বৈধতার চ্যালেঞ্জে একাধিক মামলা সুপ্রিম কোর্টে

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বৈধতার চ্যালেঞ্জে একাধিক মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতে পিটিশন দায়ের করেছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। সিএবি-এ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই তৃণমূল ও কংগ্রেসও শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে, এই অভিযোগে তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র শীর্ষ আদালতে একটি মামলা করেছেন। একই অভিযোগে পিটিশন দায়ের করেছেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশও।

ওদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে তুমুল বিক্ষোভ চলছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে। বিশেষ করে অসম এবং ত্রিপুরায়। অসমে নামানো হয়েছে আধা সেনা। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। বাজারঘাট, স্কুল বন্ধ। ট্রেন চলাচলও কার্যত বন্ধ রাখা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিক্ষোভের আঁচ পড়ছে অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও।

ভারতের নাগরিকত্ব আইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক : জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স জেনেভায় বলেছেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯ মূলগতভাবে বৈষম্যমূলক হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। লরেন্স আরো বলেন, আমরা ধারণা করছি নতুন আইনটি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বিবেচনা করবে। আশা করি তারা আইনটিকে ভারতের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

উল্লেখ্য, সংশোধিত আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অবৈধ শরণার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার বলছে, এই আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের রক্ষা করা হবে। তবে বিরোধীদের দাবি, মুসলমানদের সুরক্ষার প্রশ্ন উপেক্ষিত থাকায় আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে হেয় করেছে।

গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ মিশনের গাড়িবহরে হামলা, ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ

ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ মিশনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভারতে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিল পাসের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভকালে গত বৃহস্পতিবার মিশনের দুটি নামফলক ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ লোকজন। এর আগে গত বুধবার গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে মিশনে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারকে বহনকারী গাড়ি বহরেও হামলার ঘটনা ঘটে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।

বাংলাদেশ সরকার এই হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে তার কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান মন্ত্রণালয়ে রীভা গাঙ্গুলী দাশকে ডেকে পাঠান। এ সময় বাংলাদেশ মিশন ও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথার্থ নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। রীভা গাঙ্গুলী দাশ নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে জানান, বাংলাদেশ মিশন ও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, গুয়াহাটি মিশনে সহকারী হাইকমিশনার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে ইতোমধ্যে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, সহকারী হাইকমিশনারের গাড়ি বহরে হামলা ও মিশনের নামফলক ভেঙে ফেলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদম্যান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ

সিলেট প্রতিনিধি জানান, তামাবিল সীমান্ত ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে কারফিউ জারি হওয়ায় সিলেটের তামাবিলের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে পর্যটক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বিএসএফ। কোনো নোটিস ছাড়াই গতকাল সকাল থেকেই বিএসএফ বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় তারা নিরাপত্তাও জোরদার করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে তামাবিলে ইমিগ্রেশন শেষ করে পর্যটকরা ভারতে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ। কোনো ঘোষণা ছাড়াই এ পদক্ষেপ নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close