নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

তূর্ণা নিশীথার চালকের অবহেলায় দুর্ঘটনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ভোর রাতে দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় তূর্ণা নিশীথার চালক দায়ী বলে প্রাথমিকভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ঘটনায় ওই চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। পাশাপাশি দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের পক্ষ থেকে মোট চারটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আহত প্রত্যেকে পাবেন ১০ হাজার টাকা করে। এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে প্রায় আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো সরিয়ে মূল লাইন মেরামত করে গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমাস্টার তাহের উদ্দিন, সহকারী লোকো মাস্টার অপু দে ও গার্ড আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করছি, ড্রাইভারের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরও রেল মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি, রেলওয়ে থেকে একটি এবং জনপ্রশাসন থেকে একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, ওই রেলের লাইনে কোনো ত্রুটি ছিল না। ওই জায়গায় ট্রেন চলে সিঙ্গেল লাইনে। তূর্ণা নিশীথা বিরতিহীন ট্রেন। সে কারণে ওই স্টেশনে তূর্ণাকে পাস দিতে গিয়ে উদয়নকে লুপ লাইনে প্রবেশের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রেনটি লুপ লাইনে ঢোকার সময় তূর্ণা নিশীথা উদয়নকে ধাক্কা দেয়। তখনও ওই ট্রেনের চারটি বগি প্রধান লাইনে ছিল। তাকে পাস দিয়েছে তার সিগন্যাল দেখার কথা, কিন্তু সে দেখেনি। আমরা মনে করছি, এটা (দুর্ঘটনা) চালকের অসচেতনতার জন্য হয়েছে।

দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে উদয়ন এক্সপ্রেস যাচ্ছিল চট্টগ্রামে; আর তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিল ঢাকায়। মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিংয়ের সময় সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন মেইন লাইন থেকে লুপ লাইনে প্রবেশ করছিল। ট্রেনের ৯টি বগি লুপ লাইনে চলে যাওয়ার পর দশম বগিতে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। ওই ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) সিগন্যাল অমান্য করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি।

পাঁচ তদন্ত কমিটি : পাঁচটি তদন্ত কমিটির মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি, সরকারি রেলপরিদর্শকের দফতরের একটি ও জেলা প্রশাসনের একটি রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের একটি কমিটির প্রধান রেলওয়ের মহাপরিচালক। বাকির দুটোর মধ্যে একটির প্রধান ডিটিও এবং আরেকটির প্রধান সিইএম (পূর্ব)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসনের কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক।

রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে করা তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পূর্ব রেলের বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার বা ডিটিও নাসির উদ্দিনকে। এই কমিটির সদস্য পূর্ব রেলের বিভাগীয় সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী-১।

বিভাগীয় প্রধান পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের সিওপিএস নাজমুল ইসলামকে। কমিটির সদস্যরা হলেন পূর্ব রেলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, প্রধান সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীনকে।

মন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাজ শেষ করতে কিছুদিন দেরি হবে। মোটামুটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close