নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ আগস্ট, ২০১৯

মশক নিধনে বাড়তি খরচ

ওডোমস ক্রিম রীতিমতো ‘মহামূল্যবান’ আর ‘দুর্লভ’!

দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ডেঙ্গু। এডিস মশাবাহিত রোগটির দাপট দেশজুড়ে। সতর্কতা কিংবা আতঙ্ক যাই হোক না কেনÑ ডেঙ্গুর কারণে গত প্রায় তিন মাসে রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের জীবনধারাই পাল্টে গেছে।

মাসিক বাজারের ফর্দে চাল-ডালের আগে যোগ করতে হচ্ছে অ্যারোসল, কয়েলসহ মশা প্রতিরোধী নানা জিনিসের নাম। ঘরে যেন একটাও মশা না ঢোকে এই ভাবনা থেকে অনেকে পুরো বাসা নেট দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন। আর এসব জিনিস জোগাড় করতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাড়তি টাকা। এদিকে, ডেঙ্গুর এই মৌসুমে ওডোমস ক্রিম হয়ে উঠেছে ‘মহামূল্যবান’ আর ‘দুর্লভ’। ১২০ থেকে ১৫০ টাকার ওডোমস ক্রিম ৬০০ টাকায়ও বিক্রির কারণে নামিদামি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

রাজধানীতে একদল মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ছুটছেন চিকিৎসকের কাছে হাসপাতালে। কেউ কেউ ছোটোখাটো জ্বর-অসুস্থতাতেই যাচ্ছেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। আর বাকিরা ডেঙ্গু থেকে বাঁচার চিন্তাতেই পার করছেন দিনের অনেকটা সময়; মশার হুল থেকে রক্ষা পেতে নিচ্ছেন নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ডেঙ্গুর কারণে বদলে যাওয়া দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এমন চালচিত্রই পাওয়া গেছে। আগে যেখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটা করে মশা মারার স্প্রে ব্যবহার করত। এখন সেখানে তিন বেলা মশা মারার স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মতিঝিল এজিবি কলোনির এক বাসিন্দা সব ঘরে একটি করে অ্যারোসলের কৌটা রেখেছেন। সকালে বাসার সবাই যে যার কাজে বের হলে সব ঘরের আনাচে-কানাছে ছিটাচ্ছেন অ্যারোসল। প্রতিটি গোসলখানা দিয়ে রাখা হয়েছে একগাদা কর্পুর।

ওই গৃহিণী বলেন, আগে তো বাসায় রাখতে হয় বলে একটা অ্যারোসল রাখতাম। আরশোলা আর পোকামাকড় মারার জন্য। এখন তো প্রতি সপ্তাহে আমাকে চারটা করে অ্যারোসল কিনতে হচ্ছে।

কাছাকাছি এলাকা কমলাপুরেও দেখা গেছে একাইচিত্র। বাসার মূল দরজায় নেট লাগিয়েছেন গৃহকর্তা। দুই বারান্দা আর সব জানালায়ও একই অবস্থা রীতিমতো ‘কারাজীবন’। এসব করতেই তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। প্রতিদিন সকালে বাসায় মশা মারার অ্যারোসলও ছিটানো হচ্ছে।

বনশ্রীর বাসিন্দা সাবিনা সারাক্ষণই চিন্তায় থাকেন তার আড়াই বছর বয়সি মেয়ে অরিত্রাকে নিয়ে। সার্বক্ষণিক মেয়ের জামায় মসকিউটো প্যাঁচ লাগিয়ে রাখছেন। আর বাইরে বের হওয়ার আগে মেয়ের শরীরে লাগাচ্ছেন মশা প্রতিরোধক ক্রিম ওডোমস। এই মসকিউটো প্যাঁচ কাপড়ে লাগিয়ে দিলে সাধারণত মশা কাছে ঘেঁষে না। তবে মসকিউটো প্যাঁচের দামও বাড়তির দিকে। গত সপ্তাহে দশটি প্যাঁচের একটি প্যাকেট ৭৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একই জিনিস আগে ৬০০ টাকায় কেনা যেত।

আরামবাগের মোহাম্মদ মাসুদ মিয়া তার আট মাসের মেয়েকে নিয়ে ছয় দিন শিশু হাসপাতালে কাটিয়ে এসেছেন। ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতে তিনি একেবারেই সচেতন ছিলেন না। তবে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তার বাসার চিত্র বদলে গেছে। খরচটা বড় না, অ্যারোসল আর মসকিউটো প্যাঁচ কিনতে আমার সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়। কিন্তু নিয়ম করে মশার স্প্রে দেওয়া আর মসকিউটো প্যাঁচ ব্যবহারটাই এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বাসার সব পর্দায় এখন মসকিউটো প্যাচ লাগাই আর তিন দিন পর পর ওগুলো বদলাই। ডেঙ্গু মৌসুমের আগেও তার এই খরচ ছিল না বলে জানান মাসুম মিয়া।

বাড্ডার তাহসিনুর রহমান জানান, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর তার সাপ্তাহিক খরচ ৫০০-৬০০ টাকা বেড়েছে। মশা মারার অ্যারোসল, কয়েল কিনতেই তার এই খরচ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close