পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

শেষ পর্যন্ত মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলেন না

শেষ পর্যন্ত বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে বাছল না কংগ্রেস। প্রিয়াঙ্কা নয়, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছেন পুরোনো মুখ অজয় রাই। লোকসভা নির্বাচনে এবার পূর্ব-উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে রয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেসের হারানো জমি ফিরে পেতে এবার তাকেই ময়দানে নামিয়েছে কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বারাণসীতে প্রিয়াঙ্কাকেই দাঁড় করাবে কংগ্রেস। প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন খোদ প্রিয়াঙ্কাও। বারাণসীতে প্রিয়াঙ্কার প্রার্থীপদ নিয়ে রহস্য জিইয়ে রেখেছিলেন রাহুল গান্ধীও। প্রিয়াঙ্কার প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে তিনি সম্প্রতি মন্তব্য করেন, প্রিয়াঙ্কাই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে পরিষ্কার, আপাতত এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হচ্ছেন না রাহুল গান্ধীর বোন বা সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে।

অন্যদিকে, কুর্তা-মিষ্টি নিয়ে সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। বৃহস্পতিবার সিউড়ির জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, কুর্তা দিলে দোষ কোথায়? পহেলা বৈশাখে দিই। দুর্গাপূজায় দিই। আমও পাঠাই। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর দাবি, এ রকম উপহার তিনি অনেককেই পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এ সৌজন্যকে ভাঙিয়ে তিনি কোনো রাজনীতি করেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, বিরোধী নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, প্রতি বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে কুর্তা ও মিষ্টি পাঠান। সেই সাক্ষাৎকারে অক্ষয় কুমারের করা এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নিজেই টেনে এনেছিলেন মমতার নাম। মোদি বলেছিলেন, এটা বলে দিলে নির্বাচনে লোকসান হতে পারে তার। মোদি বলেন, মমতা দি প্রতি বছর দু-একটা কুর্তা নিজে পছন্দ করে আমাকে পাঠান। ঢাকা সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর দু-তিনবার আমায় মিষ্টি পাঠান উনি। সেটা দেখে মমতা দিও মিষ্টি পাঠান। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে এহেন ‘সম্পর্কের’ কথা সামনে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায়। রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়ে যায় নানাবিধ প্রশ্ন।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যের পরই তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে লেখেন, ৫৬ ইঞ্চির মিত্রোঁ ২৪ দিন আগে আপনাকে বিতর্কে অংশ নেওয়ার চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মমতা। বিতর্কে আসুন। কিন্তু আপনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে গিমিক করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দাবি সরাসরি খন্ডন করেনি তৃণমূল। এ নিয়ে মুখ খোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বদলে জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নেন বৃহস্পতিবারের সিউড়ির সভামঞ্চকে।

এদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রার্থী না হওয়ায় হতাশ কংগ্রেসের একটা বড় অংশ। ২০১৪ সালেও বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন অজয় রাই, সেবার তিনি ছিলেন তৃতীয় স্থানে। টিকিট না পেয়ে একসময় দল ছাড়েন বিজেপির ছাত্রনেতা অজয় রাই। যোগ দেন সমাজবাদী পার্টিতে। বিজেপির টিকিটে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে চলে গিয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টিতে। ২০০৯ সালে বারাণসী থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেন। এরপর বনিবনা না হওয়ায় নির্দল হিসেবে নিজের আসনে লড়াই করে ফের বিধায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ফের শিবির বদল করেন। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বারাণসী থেকে লড়াই করেন নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের থেকেও কম ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন কংগ্রেসের অজয় রাই। এবার আবার তাকেই প্রার্থী করেছে দল।

কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য, রাহুল গান্ধী অমেঠির পাশাপাশি কেরলের ওয়েনাড থেকে লড়ছেন। দুটি আসনেই জেতার পর তাকে একটি ছাড়তে হবে। খুব সম্ভবত অমেঠিই ছাড়বেন তিনি। সেখান থেকেও লড়তে পারেন প্রিয়াঙ্কা। আর বারাণসী থেকে প্রিয়াঙ্কার লড়ার বিষয়টি ছিল সোনিয়া গান্ধীর হাতে। বারাণসী থেকে মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে রাহুলের গুরুত্ব কমবে। তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। রাহুলের বদলে লড়াই, ‘মোদি বনাম প্রিয়াঙ্কা’ হলে তা অস্বস্তির কারণ হতো গান্ধী পরিবারের কাছে। আবার বারাণসী থেকে প্রিয়াঙ্কা হেরে গেলেও তার রাজনৈতিক জীবনের গোড়াতেই ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকত।

এ অবস্থায় মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বৃহস্পতিবার বারাণসীতে বিশাল রোডশো করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি করেছেন গঙ্গা আরতিও। মোদির রোডশোতে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকরী, সুষমা স্বরাজ, পীয়ূষ গোয়েল। এ ছাড়াও ছিলেন দলের নেতা লক্ষ্মণ আচার্য, সুনীল ওঝা, আশুতোষ ট্যান্ডন, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেসহ একধিক নেতা। বিকেলে বারাণসী পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে নরেন্দ্র মোদি চলে যান কাল ভৈরবী মন্দিরে। পরে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির কাছে লঙ্কা গেট থেকে তার রোডশো শুরু করেন। বারাণসীর ১৫০টি মহল্লায় যাওয়ার কথা মোদির রোডশো। এরই মধ্যে রয়েছে শহরের মুসলিম অধ্যুষিত মদনপুরা ও সোনারপুরা এলাকাও। বারাণসীতে বিখ্যাত দশাশ্বমেধ ঘাটে শেষ হয় ওই রোডশো। সেখানেই গঙ্গা আরতি করেন প্রধানমন্ত্রী। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদি তার মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close