নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি
কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন চেয়ে বিক্ষোভ : নগরজুড়ে ভোগান্তি
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ না হওয়ায় দাবি আদায়ের আন্দোলনে আবারও নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন আন্দোলনকারীরা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নেয়। এদিকে তাদের এই আন্দোলনের কারণে রাজধানীর শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই যানজট ছাড়িয়ে যায় পল্টন পর্যন্ত। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলগামী কয়েক হাজার লোক।
বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে আসে। পরে সবাই এক সঙ্গে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে। এর আগে সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের গেট বন্ধ করে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে শাহাবাগ মোড়ে তারা অবস্থান নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করবেন বলে জানান। তখন ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা মেলেনি। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ফার্মগেট রুটের যানবাহন মিন্টো রোড দিয়ে বাংলামোটর হয়ে যাতায়াত করছে। শাহবাগকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে ছয় ঘণ্টা বিক্ষোভের পর শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা।
সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নূর তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর একটি বার্তা পাওয়ার কথা জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার একটি বার্তা একটি বিশেষ মাধ্যমে আমাদের আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, যে তিনি যা বলেছেন, তার বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের পাঁচ দফা দাবি প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা আমাদের কর্মসূচি আজকের মত স্থগিত করলাম।
সড়ক ছাড়লেও প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে নূর বলেন, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত, তবে প্রত্যাহার নয়। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না।
আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি করতে কালক্ষেপণ করে মন্ত্রণালয় ছাত্র সমাজকে উসকে দিচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। স্লোগানে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপন। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’ জানতে চাইলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এটি বাতিল ঘোষণা করলেও তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়নি। আমরা এজন্য বরাবার সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। তাই আমরা আবারও নেমে আসছি।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করলেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। যতক্ষণ না কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হবে ততক্ষণ আমরা শাহবাগে অবস্থান করব।
রাশেদ খান বলেন, মহান জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণার ৩৩ দিন পার হলেও তা এখনো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়নি। বাংলার ছাত্র সমাজ আজ বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করব, আজকের মধ্যেই সচিবদের প্রজ্ঞাপন জারি করার নির্দেশ দিয়ে ছাত্র সমাজকে শান্ত করুন। আজকের মধ্যেই যদি প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয় তাহলে সারা বাংলার ছাত্র সমাজ সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজপথে যে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে তা চলতে থাকবে।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়েরে সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। ক্লাস, পরীক্ষা সবই সঠিকভাবেই চলছে।’
জাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সংগঠনটির জাবি ইউনিটের মুখপাত্র আরমানুল ইসলাম খান বলেন, উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশে আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া তাদের আন্দোলন চলে টানা দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর সোমবারের মতো আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করার ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আরজু।
ষোলোশহর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, গেজেট জারি না হওয়ায় আন্দোলকারী কিছু শিক্ষার্থী সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রেললাইনে ওপর অবস্থান নেন। ফলে সে সময় ক্যাম্পাসগামী শাটল ট্রেন যেতে পারেনি।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তখন পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। এরপর প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করা হবে বলে ঘোষণা দিলেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। যে কারণে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
"