মাহফুজ আল মাদানী

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

ধর্ম

আরাফার মর্যাদা

৯ জিলহজ। আরাফার দিন। আরাফা আরবি শব্দ। অর্থ পরিচয় লাভ করা। যেহেতু হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে বের হওয়ার পর পৃথিবীতে এসে বহুকাল পরে উভয়ে এক প্রান্তরে একত্রিত হয়েছিলেন, পুনঃপরিচিত হয়েছিলেন এজন্য একে আরাফা বলা হয়। মক্কার হারাম এলাকার বাইরে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বারো মাইল দূরে এ ময়দান অবস্থিত। বিশ্বের সকল মুসলমান হজ আদায়ের লক্ষ্যে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন। এজন্য ওইদিনকে আরাফার দিন বলা হয়। হাজিদের জন্য ওইদিন দ্বিপ্রহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ফরজ।

আরাফার দিনের মহিমা ও মর্যাদা অনেক। আরাফার দিন সম্মানীত চার মাসের মধ্যে বিদ্যমান। মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনার মাস বারোটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানীত’-(সুরা তাওবাহ : ৩৯)। সম্মানীত মাসসমূহ হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। আর আরাফার দিন সম্মানীত মাস জিলহজে বিদ্যমান।

আরাফার দিন হজের মাসসমূহে বিদ্যমান, যা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। মহান আল্লাহর বাণী, ‘হজে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত’-(সুরা আল বাকারা : ৯৭)। আর হজের মাসসমূহ হলো শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ।

আরাফার দিন এমন একটি নির্দিষ্ট দিন, যার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে’-(সুরা আল হজ : ২৮)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর ওই প্রথম ১০ দিনের মধ্যে আরাফার দিন বিদ্যমান।

আরাফার দিন এমন দিন যাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কসম করেছেন; যা ওইদিনের সম্মান ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে। আল্লাহর বাণী, ‘শপথ ১০ রাত্রির’-(সুরা আল ফাজর : ০২)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতে, এটা দ্বারা জিলহজের প্রথম ১০ দিন বোঝানো হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আরাফার পুরো দিন ও রাতের মর্যাদা অতুলনীয়।

আরাফার দিন বছরের ওই ১০ দিনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যে ১০ দিনের আমলসমূহের মর্যাদা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট অধিক পবিত্র এবং পুণ্যের দিক থেকে সুমহান কোনো আমল নেই আদ্বহার ১০ দিনের আমল ছাড়া। জিজ্ঞেস করা হলো, এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? আল্লাহর রাসুল বললেন, না, জিহাদও নয়। এর মাধ্যমে আরাফার দিনসহ জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

আরাফা এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম মিল্লাতকে পূূর্ণতা দান করেছিলেন। পূর্ণতা দিয়েছেন তার মাধ্যমে নিয়ামত রাজির। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ইহুদি এক ব্যক্তি বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাব (পবিত্র কোরআনে) এমন একটি আয়াত আছে, যা আপনারা তেলাওয়াত করেন। যদি আমরা ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর ওই আয়াত অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা ওইদিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোনো আয়াতের কথা বলছো? তখন সে বলল, আল্লাহর বাণী, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম’-(সুরা আল মায়িদা : ৫)। তখন হজরত উমর (রা.) বললেন, আমরা জানি যে কোনদিন এটা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল আরাফার দিন পবিত্র শুক্রবার। যা দুটি ঈদের দিন ছিল। একটি সাপ্তাহিক অর্থাৎ শুক্রবার, অন্যটি আরাফার দিন। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে, আরাফার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব অত্যধিক।

আরাফার দিন যেভাবে মর্যাদাপূূর্ণ, ঠিক তেমনি ওইদিনের আমলও অত্যধিক ফজিলতের। হাদিস শরিফে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা ৯ জিলহজের রোজা রাখতেন। এদিনে রোজা পূর্ববর্তী এক বৎসর ও পরবর্তী এক বৎসরের গুণাহ মোছন করে দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিনের দোয়া প্রসঙ্গে বলেন, উত্তম দোয়া হচ্ছে, আরাফার দিনের দোয়া। আরাফার দিনে মহান রাব্বুল আলামীন অসংখ্য লোকদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দান করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আরাফার দিন ছাড়া এমন কোনো দিন নেই যে, আল্লাহতায়ালা অধিক হারে তার বান্দাদেরকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি প্রদান করেন।’

এ ছাড়া আরাফার দিন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেদিন আল্লাহতায়ালার মেহমানগণ, সম্মানিত হাজিগণ ইসলামের প্রসিদ্ধতম স্থান আরাফাতে অবস্থান করেন; যা হজের অন্যতম রুকন। আরাফায় অবস্থান করা ছাড়া হজ আদায় হবে না। হাদিস শরিফের ভাষ্যমতে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আরাফাই হজ’। এতে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র আরাফার দিনের মহিমা অন্যান্য সকল দিনের চেয়ে সমুন্নত। তাই এ দিনের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের করণীয়, সামর্থ্যবানরা হজের মাধ্যমে আরাফায় অবস্থান করে আল্লাহর একত্ববাদের জয়ধ্বনি করা এবং যারা হজ পালনে অক্ষম তাদের উচিত আরাফার দিনে রোজা পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাকের কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া। মহান আল্লাহপাক যেন আমাদের ওইদিনের আমলসমূহ আদায়ের তাওফিক প্রদান করেন।

ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist