এস এম মুকুল

  ২৮ জুলাই, ২০১৭

ভালোমন্দ

সমকালের কড়চা

ঢাবি-টিভি : শিক্ষার উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবার টেলিভিশন চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সাততলায় একটি টিভি স্টুডিওর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ডিউ টিভি নামে ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে এই টিভি চ্যানেলটি। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের উদ্যোগে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটিই প্রথম টিভি চ্যানেল। বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এতে অর্থায়ন করেছে। শিক্ষাবিষয়ক অনুষ্ঠানের প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ, ডকুমেন্টারি, বিনোদনসহ বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান প্রচার করবে চ্যানেলটি।

মন্তব্য : খুবই ভালো, প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ডিজিটাল মিডিয়ার এই যুগে এমন উদ্যোগ আরো আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তবে বিলম্বে হলেও এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীরা আরো সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, মহাজাগতিক বিশ্ব সর্বোপরি তথ্যজ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে। দেশের শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের মেধা, অর্জন, স্বীকৃতি, সাফল্য ও আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে অনন্য ভূমিকা রাখুক এই টিভি চ্যানেলটি-প্রতিদিনের সংবাদ পরিবারের পক্ষ থেকে শুভকামনা রইল।

উল্টোপথে জবির বাস : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুটি দোতলা বাস উল্টোপথে যাওয়ার চেষ্টাকালে বাধা দেওয়ায় পুলিশের এক সার্জেন্টকে মারধর করেছেন বাসের শিক্ষার্থীরা। হামলার শিকার সার্জেন্ট কায়সার হামিদ জানান, শাহবাগের দিক থেকে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দোতলা বাস বাংলামোটরে সিগন্যালে এসে জ্যামে পড়ে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে কারওয়ান বাজারের দিক থেকে শাহবাগগামী গাড়িগুলোকে আটকে তাদের বাস দুটিকে উল্টোপথে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি নজরে এলে কর্তব্যরত সার্জেন্ট এসে বাধা দেন। এতে সার্জেন্টের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বাস থেকে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী নেমে এসে সার্জেন্টের ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা আরেক সার্জেন্ট গিয়ে মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে থাকলে শিক্ষার্থীরা বাসে ফিরে যান। পরে বাস দুটি সোজা পথেই কারওয়ান বাজারের দিকে রওনা হয়।

মন্তব্য : খুবই দুঃখজনক ঘটনা। লজ্জাজনকও বটে। যে শিক্ষার্থীরা দেশ থেকে অনিয়ম দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে, তারাই স্বেচ্ছাচারি হয়ে অনিয়ম করে বেড়ালে জাতি তাদের কাছে আর ভালো কিইবা আশা করতে পারেন। আইন মেনে চলা নাগরিকের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীরা এর ঊর্ধ্বে নয়। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতি শিক্ষার্থীদের কাছে এমন নেতিবাচক নজির প্রত্যাশা করে না। তবে বলা দরকার ইদানীংকালে নিয়মের তোয়াক্কা না করে উল্টোপথে যেভাবে গাড়ি চালানোর ট্রেডিশন তৈরি (প্রবণতা) তা আমাদের সভ্যতা, নৈতিকতা এবং রাষ্ট্রীয় আইনকে তাচ্ছিল্য করার পর্যায়ে পড়ে। আমরা দেখেছি, ক্ষমতাবান এমপি, মন্ত্রী এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের গাড়ি যথেচ্ছাভাবে জ্যাম দেখলেই উল্টোপথে চলতে শুরু করে। তখনই মনে প্রশ্ন জাগে-আজকের শিক্ষার্থীদের এই নিয়ম ভাঙার প্রবণতার জন্য রাষ্ট্রচালকরাই কি দায়ী নন? আইন এবং নিয়ম সবার জন্য সমান। সমানভাবে এর প্রয়োগ করতে হবে। সময়ের মূল্য সবার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ তিনি হতে পারেন রিকশাচালক অথবা সংসদ সদস্য। যদি দেশের এমপি, মন্ত্রীরা ট্রাফিকজ্যাম এড়িয়ে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; তবে সবার আগে তারা ট্রাফিকজ্যাম ফ্রি পথচলাচল নিশ্চিত করুন সবার জন্য। নইলে নিয়ম মেনে পাবলিক কাতারে জ্যামে আটকা পড়ে থেকে দেখুন-জনগণের কত মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে অকাতরে।

দুদকের জালে কোচিং : কোচিংবাজদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত হবে জাল সনদে চাকরি করা শিক্ষকদের। শিক্ষা বিভাগের ঘুষখোর কর্মকর্তাদের ধরতে ডিসিদের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য রাজধানীতে কাজ করছে দুদকের বিশেষ টিম। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এই বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতি, দায়িত্বে অবহেলা, আয়-ব্যয়, নামে-বেনামে সম্পদের হিসাবসহ সব কিছুরই তথ্য সংগ্রহ করছে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সংস্থাটি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর নামিদামি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তালিকা ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এজন্য ইতোমধ্যে দুদকের এক উপপরিচালকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত স্কুল-কলেজে চাকরিরত শিক্ষকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করবে। অনুসন্ধানকালে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্য পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবেন কমিশনের প্রতিবেদনে।

মন্তব্য : আহারে, এমন খবর শুনে ভাবতেই ভালো লাগছে যে শিক্ষায় দুর্নীতি ও প্রতারণা রোধে অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বোধোদয় জাগ্রত হয়েছে। এরই মধ্যে কত হাজার কোটি টাকা সাধারণ জনগণের পকেট কেটে নিয়ে গেছে মাফিয়া শিক্ষা ব্যবসায়ীরা, তার হিসাব কে জানেন। তবে দুদক নামের সংস্থাটি যে জাল ছড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষা বাণিজ্যেও জলমহালে সেখানকার বড় বড় রাঘববোয়াল খুব সহজেই এই জাল ছিন্ন করে বের হয়ে যাবে কি না। অত সহজ কাজ নয় এটি। ভাবিতে বিস্ময়- সরকার যন্ত্রকে নাড়িয়ে দিতে পারার ক্ষমতা কি রাখেন তারা। তা না হলে-কিভাবে এত নিষেধাজ্ঞার পরও এসব কার্যকলাপ চলতে পারে দেশে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর দুদক কি আসলে পেরে উঠবে ওদের টাকার জোরের সঙ্গে নাকি ভেতরে কোনো আপস ফয়সালা করে তারাও ভাগ বসাবে-এমন প্রশ্ন জনমনে উঠতেই পারে।

ইজিবাইকে সয়লাব : গণপরিবহনের সংকটকে পুঁজি করে সারা দেশ সয়লাব হয়ে গেছে বিদ্যুৎ চার্জের ওপর নির্ভরশীল অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশায়। এসব পরিবহনের অধিকাংশই বিদ্যুতের অবৈধ বা চোরাই লাইন থেকে চার্জ দিয়ে থাকে। ফলে সরকারের হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক হিসাবে যার পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা।

২০১৩ সালে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট আকার ধারণ করার পর ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে অবৈধভাবে বিদ্যুতের চার্জ দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সরকার। ইতোমধ্যে সারা দেশে ইজিবাইক ও অটোরিকশার পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশে বর্তমানে ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ ইজিবাইক ও অটোরিকশা রয়েছে। এসব যানবাহনে বৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে চার্জ দেওয়া হচ্ছে না বলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

মন্তব্য : সরকার শেষ পর্যন্ত বন্ধ করতে ব্যর্থ হলো ইজিবাইক। অথচ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে এই পরিবহন মাধ্যমটি। শুধু তাই নয়, অবৈধ পরিচালনার মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে বিশেষ মহল শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়রা পরও অবৈধভাবে এই ইজিবাইক চালাতে গিয়ে কয়েকশ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছে। এদিক দিয়েও সরকারের লস হচ্ছে। এখন হয় ইজিবাইক বন্ধ করতে হবে, নতুবা বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে হবে, যাতে সরকারের দুই দিকের ক্ষতি বন্ধ হয়।

সরকারি ওষুধ পুকুরে : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় লক্ষাধিক টাকার সরকারি ওষুধ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ওষুধের প্যাকেটের গায়ে সরকারি ও শেবাচিম হাসপাতালের সিল ছিল। শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টার কম্পাউন্ডের পুকুরে ওষুধগুলো ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ওষুধগুলো উদ্ধার করে।

মন্তব্য : এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। দেশের সরকারি হাসপাতালের সাধারণ চিত্র। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘুম পাড়িয়ে কি করে এ ধরনের কান্ড-অকান্ড ঘটে, বোধগম্য নয়। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বাইরের ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হয়। আবার হাসপাতালের রোগীরা এই ওষুধগুলোই বিনামূল্যে হাসপাতালে না পেয়ে টাকা দিয়ে কিনে আনেন। সরকারি ওষুধের পাতায় একাধিক সিলমোহর থাকা দরকার যে বিনামূল্যে রোগীদের জন্য প্রদানযোগ্য-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে সবার জবাবদিহিতা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তি কার্যকর না করলে এই চুরির পথ বন্ধ হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। এই অনিয়ম সাধারণ ও স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসন এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে-এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist