মাহমুদ আলী রাতুল

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নিবন্ধ

বাংলাদেশের উন্নয়ন : ’০৬ থেকে ’১৮

উদাহরণ দেওয়ার মতো স্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। সব সূচকেই অনেক দূর এগিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ। এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, একটি জনবহুল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে, তা উল্লেখযোগ্য। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেওয়ার মতো একটি দেশ। আবার আরেকটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক একটি টেবিল উপস্থাপন করে দেখিয়েছে, প্রধান ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টিতেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্য নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যতদিন বাংলাদেশ থাকতে ততদিন এই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাতা এগিয়ে যাবে; যা বিগত জীবনের পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট। বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির শেষ সময় ২০০৬ সাল ও ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০১৭ সাল পর্যন্ত পর্যালোচনা করে দেখলে দেখা যাবে সূচকে দুটি রাজনৈতিক দলের শাসনামলের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। খুঁজে দেখলাম বাংলাদেশ গত ৯ বছরে কোথায় গেল। পার্থক্যটা চোখ ধাঁধানো। সরকারের বিভিন্ন তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে এই পার্থক্য।

বার্ষিক বাজেট : বিএনপি ২০০৬ সালে ৬৯ হাজার ৭৪০

কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে ৪ লাখ ৬৪

হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি অর্জন : বিএনপি ২০০৬

সালে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গড় আয়ু : বিএনপি ২০০৬ সালে ৪২৭ মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ১০১০ মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ১৭৫২ মার্কিন ডলার।

সাক্ষরতার হার : বিএনপি ২০০৬ সালে ৫১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৬৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

দারিদ্র হার : বিএনপি ২০০৬ সালে ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আওয়ামীলীগ ২০১৩ সালে ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বৈদেশিক বিনিয়োগ : বিএনপি ২০০৬ সালে ১৮৭ কোটি মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ২১৫ কোটি মার্কিন ডলার।

শিশু মৃত্যুর হার : বিএনপি ২০০৬ সালে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ।

মাতৃত্বকালীন ছুটি : বিএনপি ২০০৬ সালে ৪ মাস। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৬ মাস। মাছ প্রজনন সময়ে

জেলেদের খাদ্য সহায়তা : বিএনপি ২০০৬ সালে ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৬২ হাজার মেট্রিক টন।

সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা : বিএনপি ২০০৬ সালে ৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৮ হাজার ৫২৫ মেগাওয়াট। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী : বিএনপি ২০০৬ সালে ৪৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৯০ শতাংশ।

জ্বালানি ও গ্যাস-তেলের মূল্য বৃদ্ধির গড় : বিএনপি ২০০৬ সালে ১৩৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৩৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ২২ শতাংশ ৭ শতাংশ।

দৈনিক গ্যাস উত্তোলন : বিএনপি ২০০৬ সালে ১৫৩১ মিলিয়ন ঘনফুট। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ২২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ২৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

সমুদ্রসীমা জয় : বিএনপি ২০০৬ সালে নিস্ক্রিয়। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে এক লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটার।

রফতানি আয় : বিএনপি ২০০৬ সালে ১০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৩০ দশকি শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৩৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমদানি : বিএনপি ২০০৬ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : বিএনপি ২০০৬ সালে ৩ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ১৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রেমিটেন্স প্রবাহ : বিএনপি ২০০৬ সালে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ১ দশকি ৪২ বিলিয়ন

মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

হাসপাতালের সংখ্যা : বিএনপি ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৮৩টি। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ২ হাজার ৫০১টি। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৭৫৭টি।

কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাস্থ্যসেবা : বিএনপি ২০০১ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ১১ হাজার ক্লিনিক পুনচালু করে। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ১৩ হাজার ক্লিনিক।

পবিত্র হজ পালন : বিএনপি ২০০৬ সালে ৪০ হাজার হাজি। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ১ লাখ ১০ হাজার হাজি। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩০ হাজার হাজি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা : বিএনপি ২০০৬ সালে ৫৭ লাখ মাত্র। আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালে ৪ কোটি। আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে ৬ কোটি ৭২ লাখ।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার ছিল রিজার্ভ শূন্য। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দেশকে এগিয়ে নেওয়ার হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধুর সরকার। তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। জাগানিয়া নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিত কখনোই ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে দেশের অগ্রযাত্রা। ঘটে ছন্দপতন। তখনই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বাংলাদেশ। দীর্ঘ ২১ বছর অপেক্ষার পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আবার এগিয়ে চলে বাংলাদেশ। কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্কুল-কলেজসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলে বাংলাদেশ। মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। কিন্তু ২০০১ সালে ফের ছন্দপতন।

বিএনপির ৫ বছর ও সেনাশাসিত সরকারের তিন বছরে উল্টো দিকে চলতে থাকে বাংলাদেশ। পেছাতে পেছাতে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয় সোনার বাংলা। ২০০৮ সালের শেষ দিকে বিপুলসংখ্যক ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালের শুরুতে আবারও সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি দেশের হাল ধরে আবারও দেশকে উন্নয়নের মহড়ায় নিয়ে যান দুর্বার গতিতে। ৮ বিলিয়ন ডলার সেই অর্থনীতির আকার এখন ২৭২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয় অন্য সরকারের তুলনায় কয়েকগুন বেশি, তাই বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পেরেছেন ‘মঙ্গা’ শব্দ ভুলিয়ে দিতে। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী উন্নত বিশ্বের কাতারে দেখতে হলে আওয়ামী লীগের সরকার বার বার দরকার।

লেখক : সহসভাপতি, প্যারেন্টস ফোরাম ফর

ডিফরেন্টলি অ্যাবল (পিএফডিএ), ভিটিসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close