আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

লাশের গল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িগুলো

আল নুর মসজিদের পেছনে তাকালে একটি দৃশ্য দেখে অন্তরাত্মা হু হু করে কেঁদে ওঠবে। যে শত চেষ্টা করেও কাঁদতে পারে না তিনিও ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাবেন। দৃশ্যটি অন্য কিছু নয়, দৃশ্যটি কয়েক ডজন কার ও একটি খাবার বহনকারী ট্রাকের। গত তিন দিন ধরে এখানেই পড়ে আছে। সেগুলো ড্রাইভ করে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। কারণ গত শুক্রবারের বর্বর হামলায় গাড়ির মালিকরা মসজিদেই প্রাণ হারিয়েছেন। ওইদিন দুপুরে জুমার নামাজ চলাকালে মুসল্লিদের পাখির মতো গুলি করে মারে অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের এক উগ্রপন্থি। এতে প্রাণ হারায় অর্ধশত মুসল্লি। আহত হন আরো কয়েক ডজন।

মসজিদটির পাশের বাসিন্দা বলেন, ‘এটা একটা মর্মস্পর্শী দৃশ্য। তিন দিনেও গাড়িগুলো এখানে পড়ে থাকা শুক্রবারের ট্র্যাজিডির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’ তারা জানে, এ গাড়ির মালিকরা গাড়িগুলো নিতে আর ফিরে আসবে না।

একজন বাসিন্দা জানান, মসজিদে ওইদিন যা ঘটেছে তা ছিল ভয়ঙ্কর। এ ছাড়া যারা প্রাণ হারিয়েছে তারা সত্যিই চমৎকার মানুষ ছিলেন। আর আমি এ বিষয়টি সবাইকে জানাতে যে, তারা সত্যিই চমৎকার ছিলেন। ওই বাসিন্দার বাড়ির জানালা ভেদ করে তাকালেই মসজিদটি দেখা যায়। সেখান থেকে মসজিদের দিকে তাকালে মনে হবে মালিকরা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন গাড়িগুলোও প্রাণ হারিয়েছে। ঘটনার পর মরদেহগুলো মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে মরদহগুলো এখনো আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্ডান বলেছেন, ‘নিহতের আত্মীয়রা যাতে ইসলামী রীতিতে মরদেহগুলো দাফন করতে সেজন্য মরদেহগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুতগতিতে কাজ করে যাচ্ছে।’

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। হামলাকারী ভিডিও গেমের ন্যায় ঠাস ঠাস করে গুলিতে ছুড়তে ছুড়তে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বৃষ্টির মতো গুলিতে লুটিয়ে পড়েন মুসল্লিরা। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে হামলাকারী।

হামলাকারী মসজিদের ভেতরে ঢোকার পর থেকেই এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করেন। মসজিদের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে গিয়ে প্রথম যে কক্ষটি পান সেখানে মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে টানা গুলি করা শুরু করেন। গুলির শব্দ শুনে মুসল্লিরা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়েন। পরে এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ঘুরে ঘুরে গুলি করতে থাকেন। জীবিত মানুষ দেখলে গুলি করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কাছাকাছি লিনউড মসজিদেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। শান্তির দেশে এমন জঘন্য হামলার ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন এই হামলাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন।

ঘটনার পরে পুলিশ জানিয়েছে, ট্যারেন্টের অস্ত্র বৈধ ছিল। সে কারণেই তার গুলি কিনতেও অসুবিধা হয়নি। সেদিনই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এর আগে কয়েকবারই অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনতে চাইলেও সেটি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার এই ভয়াবহ ঘটনার পর তড়িঘড়ি করেই আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। আজ বৈঠক বসছে দেশটির মন্ত্রিসভা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close