আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

‘আসিয়া বিবিকে নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কানাডার আলোচনা চলছে’

পাকিস্তানে ব্লাসফেমির অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে নিয়ে ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কানাডা। প্যারিসে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ কথা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ব্লাসফেমির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরও কট্টর ইসলামী সংগঠনের রোষের মুখে কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না আসিয়া বিবি।

২০০৯ সালে মুসলিম শ্রমিকদের গ্লাসে আসিয়ার পানি পান করাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। ২০১০ সালে পাকিস্তানের ব্লাসফেসি আইনে দেশটির প্রথম নারী হিসেবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে তখন থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো সমালোচনা শুরু হয়। উচ্চ আদালতের রায় বাতিল করে গত ৩১ অক্টোবর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আসিয়া বিবির মৃত্যুদন্ড বাতিল করে তাকে সাজা থেকে অব্যাহতি দেন। রায় ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভ শুরু করে কট্টরপন্থি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক (টিএলপি)। গত ৩ নভেম্বর সরকারের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, আসিয়ার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও রিভিউ পিটিশনের বিরোধিতা না করার পাশাপাশি সহিংস কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন বিক্ষোভকারীদের ছেড়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এর বিপরীতে টিএলপির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ বন্ধের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি তাদের কর্মকান্ডে কেউ মানসিক আঘাত পেয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় জীবন শঙ্কায় থাকা আসিয়ার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরেই নির্মাণ করা হয়েছে ‘সেফ হাউস’।

সম্প্রতি আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মসিহ জানিয়েছিলেন, তাদের আশ্রয় দিতে ব্রিটেন, কানাডা, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আসিয়া প্রশ্নে এএফপিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।’ তার এক মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে ট্রুডোর এ মন্তব্যের কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে আসিয়াকে কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নেই দুই দেশের আলোচনা চলছে কি না তা নিশ্চিত করেননি ওই মুখপাত্র।

এএফপিকে ট্রুডো বলেন, ‘এটি একটি দেশের স্পর্শকাতর বিষয়, যাকে আমরা সম্মান করি। সে জন্য আমি এ নিয়ে আর বেশিকিছু বলতে চাই না। তবে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে কানাডা মানুষকে স্বাগত জানানোর দেশ।’ এর আগে গত সপ্তাহে আসিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল কানাডা। সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও আসিয়া বিবিকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দিতে সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কারাগারের সেফ হাউসে থাকা আসিয়া বিবির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আসিয়া বিবির কক্ষে অতিরিক্ত নজরদারি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ওই জায়গায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে তল্লাশি করা হচ্ছে। যারা আসিয়ার জন্য খাবার প্রস্তুত করেন তাদেরও তল্লাশি করা হয়। সোমবার (৫ নভেম্বর) আসিয়ার আইনজীবী সাইফুল মালুক নেদারল্যান্ডসের হেগে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাকে তার ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে’ দেশ ছাড়তে হয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে দেশ ছাড়তে বলেছে। সংবাদ সম্মেলনে মালুক বলেন, ‘আমি জোরালোভাবে বলেছিলাম, আসিয়াকে কারাগার থেকে বের না করা পর্যন্ত আমি দেশ ছাড়ব না।’

আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অবস্থান সব সময়ই ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে। তারা মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্ন সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন নয়, ধর্ম অবমাননাকেও তাই আইনি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিচার করা যায় না। পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড, তবে সেখানে অনেক মানুষ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close