আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

ভারতে আটজনের প্রাণ কেড়ে শান্ত হলো ‘তিতলি’

হারিকেনের শক্তি নিয়ে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশে তান্ডব চালানোর পর প্রবল ঘূর্ণিঝড় তিতলি দুর্বল হয়ে পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তিতলির তান্ডবে ঘর ও গাছে চাপা পড়ে অন্তত আটজনের প্রাণ গেছে; উড়ে গেছে শত শত ঘর। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ওড়িশার গোপালপুর এবং কলিঙ্গপত্তমের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানে।

সতর্কতামূল ব্যবস্থা হিসেবে আগেই তিন লাখ লোককে উপকূলীয় নিচু এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওড়িশা রাজ্য সরকার ১৮টি জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে। দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জি নিউজ ইনডিয়া জানিয়েছে, তিতলির প্রভাবে ওড়িশায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গঞ্জাম ও গজপতি জেলায়। তবে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ায় প্রাণহানি অনেকটা এড়ানো গেছে। অন্ধ্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীকাকুলাম ও বিজয়নগরমে। সেখানে কয়েক হাজার গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অন্ধ্র আর ওড়িশায় বৃহস্পতিবার থেকেই ট্রেন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। গাছ উপড়েপড়ায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামের জেলা প্রশাসক ধনঞ্জয় রেড্ডি রয়টার্সকে বলেছেন, তার এলাকায় ছয় থেকে সাত হাজার বিদ্যুতের খুঁটি ঝড়ে উপড়ে গেছে। ফলে প্রায় পাঁচ লাখ লোক এখন রয়েছেন বিদ্যুৎহীন অবস্থায়।

বিবিসি জানিয়েছে, যে আটজনের মৃত্যুর খবর এসেছে, তারা সবাই অন্ধ্র প্রদেশের। রাজ্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের কর্মকর্তা ডি ভারাপ্রসাদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওড়িশায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ঢলে বাড়ি ভেসে যাওয়ায় এক পরিবারের চার সদস্যসহ ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারিয়ে ওড়িশা উপকূলবর্তী এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাবে চলছে ভারী বর্ষণ। ভারতের আবহাওয়া দফতরের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পরে। সে ক্ষেত্রে দুর্গা পূজার উৎসবের মৌসুমে মানুষকে ভুগতে হতে পারে।

তিতলির প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে দুই দিন ধরে। স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারে কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ ও কুতুবদিয়ার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তবে তিতলি ভারতের তিনটি রাজ্য ঘুরে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা উপকূলেও চলে আসতে পারে বলে যে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদের ছিল, তা এড়ানো গেছে ঘূর্ণিঝড়টি আগেই দুর্বল হয়ে যাওয়ায়।

শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, তিতলি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে ক্রমশ আরো দুর্বল হতে থাকবে।

তবে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য এখনো বেশি। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে।

এই আবহাওয়ায় সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

সেই সঙ্গে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।

আর খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা শুক্রবার ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমে আসতে পারে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খেপুপাড়া, ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়, ২০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কক্সবাজারের টেকনাফে বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close