আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ঘুষ!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে গোপনে অন্তত ৪ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়া হয় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোয়েনকে। এই ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত কিয়েভের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের নেতার পক্ষে কাজ করা মধ্যস্থতাকারীরা ওই অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনানুযায়ী এই ভূমিকার জন্য কোয়েনের ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা ছিলেন না। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাইকেল কোয়েন। গত বছরের জুনে হোয়াইট হাউসে ওই বৈঠকটি হয়েছিল। বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থা ট্রাম্পের সাবেক প্রচারণা ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্টকে নিয়ে শুরু করা তাদের তদন্ত বন্ধ করে দেয়। পোরোশেঙ্কোর প্রশাসনে থাকা ইউক্রেনের এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হোয়াইট হাউস পরিদর্শনের আগে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রেজিস্ট্রার লবিস্ট ও ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস ট্রাম্পের সঙ্গে পোরোশেঙ্কোর সংক্ষিপ্ত একটি ছবি তোলার সুযোগ করতে পারলেও এর বেশি কিছু করতে পারেনি। কিন্তু পোরোশেঙ্কো চাইছিলেন এমন কিছু যাকে ‘বৈঠক’ হিসেবে জাহির করা যেতে পারে। পোরোশেঙ্কো ট্রাম্পের সঙ্গে বসার জন্য অন্য রাস্তা ধরার সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক এক সহযোগীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, সহায়তা করার জন্য তিনি ইউক্রেনের এক বিশ্বস্ত এমপিকে ডেকে আনেন। ওই এমপি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতদের মাধ্যমে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোয়েনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কোয়েনকে চার লাখ ডলার দেওয়া হয়। তবে এই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ট্রাম্প জানতেন এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইউক্রেনের দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র ঘটনার একই বর্ণনা দিয়েছে, তবে কোয়েনকে মোট ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনজীবীরও সমর্থন পাওয়া গেছে। এই আইনজীবীর নাম মাইকেল আভেনাতি। তিনি কোয়েনের আর্থিক বিষয়াদির বিস্তারিত উদ্ঘাটন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে পর্নো তারকা স্ট্রমি ড্যানিয়েলসে তিনিই সামনে নিয়ে এসেছেন।
আভেনাতি জানিয়েছেন, সন্দেহজনক এই তৎপরতার বিষয়ে কোয়েনের ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে, এতে দেখা গেছে, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ’ থেকে অর্থ নিয়েছেন তিনি।
তবে কোয়েনের পাশাপাশি যে দুই ইউক্রেনীয় ট্রাম্পের কাছে পৌঁছানোর বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে বলা হয়েছে, তারাও এই বর্ণনা অস্বীকার করেছেন। কিয়েভের ওই ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোয়েনের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন ইউক্রেনীয় ফেলিক্স স্যাতের; অভিযুক্ত সাবেক এক গ্যাংস্টার যিনি একসময় ট্রাম্পের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। স্যাতের এবং তার আইনজীবী, উভয়েই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দফতর প্রথমে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছিল, কিন্তু পরে এক বিবৃতিতে ওই কাহিনীকে ‘নির্জলা মিথ্যা, কুৎসা ও বানোয়াট’ বলে উল্লেখ করেছে।
‘প্রচুর অর্থ খরচ করা হলেও’ হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার খুব বেশি সুযোগ পাননি পোরোশেঙ্কো। যার জন্য তিনি ওয়াশিংটনে উড়ে গিয়েছিলেন সেই সাক্ষাৎ কয়েক মিনিটের কথাবার্তা এবং একটি হ্যান্ডশেকে সীমাবদ্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
হোয়াইট হাউসের শিডিউল জানিয়েছে, পোরোশেঙ্কোকে যখন ওভাল দফতর ‘ঢুকিয়ে দেওয়া’ হয় তখন ট্রাম্প একটি স্টাফ মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
"