আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৮ মার্চ, ২০১৮

রাশিয়ায় আগুনে মৃত ৬৪ সাইবেরিয়াজুড়ে বিক্ষোভ

রাশিয়ার সাইবেরিয়ার কেমেরোভো শহরের একটি বিপণীবিতান ও বিনোদন কেন্দ্রে আগুন লেগে অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর কোনো ঘণ্টা বা অ্যালার্ম বেজে ওঠেনি এবং বিপণীবিতান থেকে বের হওয়ার দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্থানীয় সময় রোববারের এ আগুন ওপরের তলায় লাগে। এসময় দোকান, সিনেমা ও শিশুদের খেলার জায়গায় মানুষের ভিড় ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রাণ বাঁচাতে লোকজন জানালা দিয়ে লাফ দিচ্ছে। তদন্তকারী কমিটি বলেছে, অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্ব থাকা টেকনিশিয়ানকে আগুন লাগার কথা বলা হলেও তিনি ভবনের অ্যালার্ম ব্যবস্থা বন্ধ রাখেন। কমিটি জানায়, অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে থাকা অন্য দুই কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ১০ জনকে এখনো নিখোঁজের তালিকায় রাখা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষকরা ছুটিতে থাকা ছাত্রদের খোঁজ করছেন। কতজন ছাত্র ওই ভবনে ছিল তা তারা জানেন না।

ফেসবুক পোস্ট রাশিয়ার রাজনীতিবিদ আন্তন গোরেলকিন বলেন, বের হওয়া রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। যার ফলে এটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। তিনি আরো জানান, এক নির্বাপণকারী শুরুতেই আগুন নেভাতে পারতেন। কিন্তু তিনি কাজটি করেননি। সাইবেরিয়ার ডেপুটি গভর্নর ভøাদিমির চেরনভ বলেন, প্রশ্নটা হলো কেন দরজা রাখা হয়েছিল? রাশিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, ছাদের বেশির ভাগই ধসে পড়েছে। চতুর্থ তলায় শিশুদের খেলার ঘর ও সিনেমায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিনির্বাপকরা বলছেন, একদিন পরও ভবন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ভবনের বাকি অংশ ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেপুটি গভর্নর চেরনভ আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুদের খেলার ঘরে এক শিশুর কাছে সিগারেট লাইটার ছিল, সেখান থেকে আগুন ফোমে লাগে। এরপর বারুদের মতো আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’ তবে স্থানীয় এক টিভি বলছে, বিদ্যুতের গোলযোগ থেকে এ আগুন লেগে থাকতে পারে।

বিক্ষোভে উত্তাল সাইবেরিয়া : বিনোদনকেন্দ্রে আগুন লেগে ৪১টি শিশুসহ কমপক্ষে ৬৪ জন মানুষের জীবন্ত পুড়ে মরার ঘটনায় গোটা রাশিয়া, বিশেষ করে সাইবেরিয়া অঞ্চল, এখন বিক্ষোভে উত্তাল। কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে কেমেরোভো শহরের শপিং মল কাম বিনোদনকেন্দ্রটির ফায়ার অ্যালার্ম অকেজো পড়েছিল। আর বের হওয়ার সব পথও তারা রেখেছিলেন তালাবন্ধ করে। সেজন্য সবার ক্ষোভ মাথামোটা কর্মকর্তাদের ওপর। এ নিয়ে সাইবেরিয়াসহ গোটা রাশিয়া এখন বিক্ষোভে কাঁপছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বলেছেন গত রোববারের কেমেরোভো ট্রাজেডি ‘দুর্বৃত্তদের গাফিলতির ফল’।

সংবাদ মাধ্যমগুলো রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে সাইবেরিয়ার বিভিন্ন শহরে কর্মকর্তাদের গাফিলতিজনিত এই ভয়ানক বিয়োগান্ত ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। খোদ কেমেরোভো শহরে শোকার্ত হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিহতদের ছবি হাতে রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ জানায়। এ সময় অনেককে আগুনে পুড়েমরা শিশুদের ছবি-হাতে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার শহরটির শোকার্ত মানুষের সঙ্গে সংহতি জানাতে, সমবেদনা নিয়ে শোকার্তদের পাশে দাঁড়াতে কেমেরোভোতে গিয়ে হাজির হন। তিনি সেখানে গিয়ে নিহত মানুষদের স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। তবে জনসমক্ষে হাজির হননি পুতিন। সরকারিভাবে নিহতদের সংখ্যা ৬৪ জন বলা হলেও কেমেরোভোর বাসিন্দারা দাবি করেছেন, মারা যাওয়াদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। সরকার এ নিয়ে লুকোছাপা করছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সুবিশাল বিনোদন কেন্দ্রটিতে যখন আগুন লাগে তখন অ্যালার্ম ছিল অকেজো (কারো কারো মতে, অ্যালার্ম সুইচ অফ করা ছিল), এমার্জেন্সি এক্সিটও (জরুরি নির্গমন পথ) বন্ধ করা ছিল। তবে আগুন লাগার কারণ তারা এখনো জানাতে পারেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist