প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ জুলাই, ২০১৭

পানি থই থই চাঁদের অন্দর

চাঁদের দুই মেরুতে পানি (আইস ওয়াটার হিসেবে) আছে, জানা ছিল। পিঠেও (সারফেস) কোথাও কোথাও পানি আছে, তা অজানা ছিল না। কিন্তু চাঁদের একেবারে অন্দরে ‘ম্যান্টল’-এ যে পানি রয়েছে পুরোপুরি তরল অবস্থায়, এবার তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা গেল। এও জানা গেল, তরল অবস্থায় থাকা সেই পানি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা গতকাল বুধবার এ খবর জানায়। চাঁদ মুলুকে নয় বছর আগে পাঠানো ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-১’-এর দেওয়া তথ্যাদি আর ছবি বিশ্লেষণ করে এই চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর যেহেতু সেই পানি এখনো তরল অবস্থায় রয়েছে, তাই শুধুই প্রাণের সম্ভাবনা নয়, বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস আরো জোরালো হলো, প্রাণ বা জীবনের অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবেই রয়েছে চাঁদে। হতে পারে তা অণুজীব। যে গবেষণাপত্র এই চমকদার তথ্যটি দিয়েছে, সেটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-জিওসায়েন্স’-এর ২৪ জুলাই সংখ্যায়। মূল গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক র‌্যালফ মিলিকেন ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো শুয়াই লি। সহযোগী গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন দুই ভারতীয়। একজন ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মহেশ আনন্দ। অন্যজন আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বিষ্ণু রেড্ডি।

বহু কোটি বছর আগে চাঁদের বিশাল বিশাল আগ্নেয়গিরিগুলো ছিল জীবন্ত। তাদের জ্বালামুখ থেকে অসম্ভব গরম লাভাস্রোত (যার অন্যতম উপাদানÑ ‘ম্যাগমা’) বেরিয়ে এসেছিল। ম্যাগমা বেরিয়ে আসে পৃথিবী ও চাঁদের ম্যান্টল বা হৃদয়ের অন্তঃপুর থেকে। সেই ম্যাগমার মধ্যেই ছিল কাচের টুকরোর মতো পদার্থ। যাকে বলা হয়, ‘ভলক্যানিক গ্লাসেস’। চাঁদের প্রায় গোটা পিঠজুড়ে এখনো ছড়িয়ে রয়েছে সেই কাচের টুকরোগুলো। প্রচুর পরিমাণে। প্রায় সাড়ে চার দশক আগে নাসার দুটি মহাকাশযান ‘অ্যাপোলো-১৫’ ও ‘অ্যাপোলো-১৭’ চাঁদের পিঠ থেকে কুড়িয়ে এনেছিল সেই ম্যাগমায় মিশে থাকা কাচের টুকরোগুলো। তখনই বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন, সেই ‘ভলক্যানিক গ্লাসেস’ টুকরোগুলো একেবারে ভিজে জবজবে হয়ে রয়েছে। তাদের ধারণা হয়েছিল, চাঁদের পিঠের কোনো কোনো অংশ, যেখানে এখনো পানি আছে, সেই পানিতেই বোধহয় ভিজে জবজবে হয়েছিল ম্যাগমার সঙ্গে থাকা কাচের টুকরোগুলো। কিন্তু, ‘চন্দ্রযান-১’-এর পাঠানো তথ্যাদি আরো নিখুঁতভাবে পরখ করে এবার গবেষকরা দেখেছেন, চাঁদের পিঠে যেখানে এখন পর্যন্ত পানির হদিস পাওয়ার সম্ভাবনা দূর অস্তই, সেই সব জায়গা থেকে কুড়িয়ে আনা কাচের টুকরোগুলোও ভিজে জবজবে হয়ে রয়েছে।

এর থেকেই গবেষকরা এবার নিশ্চিত হতে পেরেছেন, চাঁদের পিঠের পানির জন্য ওই কাচের টুকরোগুলো ভেজেনি। ওই টুকরোগুলো চাঁদের ম্যান্টল থেকে উঠে এসেছিল আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের সঙ্গে মিশে থাকা ম্যাগমার মধ্যে ও আর তাদের আশপাশে। ফলে, চাঁদের ম্যান্টলে যে পানি রয়েছে তরল অবস্থায়, এবার তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা। আর যেহেতু ওই কাচের টুকরোগুলো চাঁদের পিঠে প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে, তাই গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, ম্যান্টলে তরল অবস্থায় থাকা পানি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আর তা ম্যান্টলের অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে।

গবেষকদের দাবি, পৃথিবীতে যত পানি আছে, চাঁদের ম্যান্টলে থাকা পানির পরিমাণ তার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না।

মূল গবেষকদের অন্যতম হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো শুয়াই লি ই-মেইলে আনন্দবাজারকে লিখেছেন, ‘এত দিন আমাদের ধারণা ছিল, চাঁদের ম্যান্টলটা একেবারে শুকনো খটখটে। সেখানে পানির বিন্দুমাত্র নেই। এবার নিশ্চিত হলাম, পানি তো তরল অবস্থায় রয়েছেই চাঁদের ম্যান্টলে, তা পরিমাণেও প্রচুর। ফলে?, অণুজীব হলেও, নিশ্চিতভাবেই প্রাণ রয়েছে চাঁদের ম্যান্টলের কোনো না কোনো অংশে।’

সহযোগী গবেষক, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বিষ্ণু রেড্ডির কথায়, ‘ফলে, পানি নাকি তাপ বিকিরণ, ঠিক কার জন্য ওই তরঙ্গদৈর্ঘ্য ধরা পড়ছিল স্পেকট্রোমিটারের ‘দর্শনে’, তা নিখুঁতভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। এবার গবেষণাগারে কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে তাপ বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে জলের অস্তিত্ব বোঝার তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে আলাদা করে দেখা সম্ভব হয়েছে। তাই নিখুঁতভাবে জানা গেছে, চাঁদের ম্যান্টলে সত্যি সত্যিই পানি রয়েছে। আর তা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।’

গবেষকরা জানিয়েছেন, এবার তারা আরো বেশি নিশ্চিত হয়েছেন মঙ্গলের চেহারার মতো কোনো ধূমকেতু বা গ্রহাণু বা অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তু সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে এসে সজোরে ধাক্কা মেরেছিল পৃথিবীকে। সেখান থেকেই জন্ম হয়েছিল চাঁদের। আর সেই ধূমকেতু বা গ্রহাণু থেকেই পানি ঝরে পড়েছিল চাঁদে। একইভাবে পৃথিবীতেও পানি এসেছিল বলে বিজ্ঞানীদের অনেকেরই ধারণা। এও নিশ্চিত হয়েছেন, ম্যান্টলে পানি রয়েছে বলেই একসময় চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্র অত জোরালো ছিল। তার বায়ুম-লকে সে ধরে রাখতে পেরেছিল বেশ কিছু দিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist