ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে ৭০০তম উরস শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় গিলাফ চড়ানোর মধ্য দিয়ে উরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আজ বুধবার ভোরে আখেরি মোনাজাত ও শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী উরস। উরসকে কেন্দ্র করে হজরত শাহাজালাল (রহ.) এর মাজার প্রাঙ্গণ ভক্ত-আশেকানদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য নগরের বেশকিছু সড়কে যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় মাথায় লাল সালুর পাট্টি বেঁধে দলবদ্ধ হয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাজার প্রাঙ্গণের দিকে এগোচ্ছিলেন কয়েকজন ভক্ত আশেকান। এ সময় ‘লালে লাল বাবা শাহজালাল’ ধ্বনিতে মুখর হয়েছিলে মাজার এলাকা। এভাবে দলে দলে মাজারে আসেন ভক্ত আশেকানরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে গিলাফ চড়ানোর জন্য ভিড় করেছেন ভক্তরা। তবে গত রোববার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানের ভক্তরা সিলেট আসতে শুরু করেন।

সকাল পৌনে ১০টায় প্রথমে মাজারে গিলাপ চড়ায় শাহজালাল মাজার কর্তৃপক্ষ। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও মাজারে গিলাফ দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাজারে গিলাপ চড়াবেন ভক্ত-আশেকানরা। এরপরই শুরু হবে পশু জবাই। সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৪৫টি গরু ও ৯০টি খাসি দান হিসেবে পাওয়া গেছে। রাতে খতমে সফিনা, কোরআনখানি এবং রাত ২টা পর্যন্ত জিকির চলবে। আজ বুধবার ভোর ৩টায় আখেরি মোনাজাত শেষে শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উরসের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।

প্রতি বছরের মতো ১৯ ও ২০ জিলকদ হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে উরস উদ্যাপিত হয়। উরসে যোগ দিতে কুমিল্লা থেকে আসা ফারুক মিয়া বলেন, প্রতি বছর উরসের দুই তিন আগেই সিলেটে এসে পৌঁছি। এখানে না এলে মনের শান্তি মিলে না। মনের শান্তি পেতেই এখানে আসি।

মাজার কমিটি সূত্রে জানা যায়, উরসে আগত অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভক্ত আশেকানদের সমন্বয়ে দুই হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া উরসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিমের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগের আলাদা টিম মাজার এলাকায় সার্বক্ষণিক উপস্থিত রয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছেন।

পুলিশ জানায়, উরসকে কেন্দ্র করে গত রোববার থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেন। ওইদিন থেকেই পুরো সিলেটে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। সোমবার থেকে মাজার এলাকায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সহ¯্রাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের পুলিশের পাশাপাশি মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তৎপর রয়েছেন। সাদা পোশাকি পুলিশও রয়েছেন।’

এদিকে উরস উপলক্ষে সিলেট নগরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুলিশ। নগরের আম্বরখানা, চৌহাট্টা, দর্শন দেউড়ি, মিরের ময়দান, ঝর্ণারপাড়, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পশ্চিম থেকে দর্শন দেউড়ি এবং দর্শন দেউড়ি থেকে পেট্রল পাম্প ও রাজারগলি মাজার গেট পর্যন্ত।

ইসলাম প্রচারের জন্য হজরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন।

"