নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জুন, ২০১৯

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে এসি বিস্ফোরণ

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে এসি বিস্ফোরণ। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। রাজধানীর শনিরআখড়ায় গত সোমবার এসি বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। এ ঘটনার জেরে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত ২৬ মে গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী এলাকায় একটি সোয়েটার কারখানায় এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। এর আগে ২৫ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী মারা যান। এছাড়া সম্প্রতি ২০১৭ ও ২০১৬ সালে একাধিক এসি দুর্ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এসিতে কেন বিস্ফোরণ ঘটে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ড. মহম্মদ আলি বলেন, এসির মধ্যে কম্প্রেসার থাকে। এই কম্প্রেসারের গ্যাসের প্রেসার লেভেলের দুটি লিমিট থাকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন। প্রেসার সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করলে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।

তিনি বলেন, এসির মধ্যে গ্যাস দেওয়া হয়। এটি দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে না। কিন্তু কোনো কারণে বিস্ফোরণ প্রতিরোধের জন্য যেসব সেন্সর থাকে, সেগুলো কাজ না করে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে। এসি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বিকল্প নেই বলে মত দেন ড. মহম্মদ আলি। তিনি বলেন, এসি নিয়মিত সার্ভিসিং জরুরি। একইসঙ্গে এসি সবসময় চালুও রাখা যাবে না। তবে এসি বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানে না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, কেন বিস্ফোরণ ঘটে, এটা যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। আমরা এই বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞ নই। তবে শনিরআখড়ায় কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসি বিস্ফোরণের কারণ নিয়মিত সার্ভিসিং না করা। সার্ভিসিং না করায় পানি ও গ্যাস জমে যায়। তখন বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, সার্ভিসিং করালেও অনেকে ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে সার্ভিসিং করান না। তাই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে সবাইকে।

এদিকে এসির বিস্ফোরণ এড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করছে। এতে সাতটি বিষয়ে নজর রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রথমত, ২৪ ঘণ্টা এসি চালু না রাখা। বলা হচ্ছে, দীর্ঘ সময় চালু থাকলে এসির যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। এজন্য মাঝে-মধ্যে এক থেকে দুই ঘণ্টা এসিকে বিশ্রাম দিতে হবে।

বছরে অন্তত একবার প্রফেশনাল টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করাতে হবে। মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ফল্টের কারণে যেকোনো সময় আগুন ধরে যেতে পারে।

নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের বার্তায় বলা হয়েছে, খেয়াল রাখতে হবে এসির ভেতর কিছু জমাট বেধে যেন না যায়। এসির এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এই ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন এসি রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এসির ওয়ারিং পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি বলা হচ্ছে। এসির কাজ করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। অনেক সময় বজ্রপাতেও এসি বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য হাইভোল্টেজ এড়াতে ভবনের ছাদে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিম্নমানের নকল এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া গরমের শুরুতে এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার এসবের অবস্থা ঠিকমতো পরীক্ষা করতে হবে।

অনেক দিন বন্ধ থাকার পর চালু করতে গেলে এসির সংযোগ তার পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। অনেক দিন বন্ধ থাকার কারণে চালু করলে এসির ভেতরে শব্দ হতে থাকে। পানিও পড়তে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close