আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ মে, ২০১৯

সাইবার নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ‘বিদেশি প্রতিপক্ষ’ থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট এই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা সেসব মার্কিন কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য হবে যারা বিদেশি টেলিকম ব্যবহার করেন। ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে দেশটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। তবে ট্রাম্প নির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ করেননি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটা প্রধানত চীনের টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি হুয়াওয়েকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, চীনের তৈরি কোম্পানির পণ্য নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। তবে চীনের এই কোম্পানি বলেছে, তাদের কাজ কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে না। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই আদেশের লক্ষ্য হলো ‘বিদেশি প্রতিপক্ষ’ থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করা। এই আদেশের বলে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি আছে এমন লেনদেনে বাধা দিতে পারবেন’ বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।এই পদক্ষেপকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানান মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের চেয়ারম্যান অজিত পাই। এক বিবৃতিতে এ পদক্ষেপকে ‘আমেরিকান নেটওয়ার্কগুলো নিরাপদ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

পৃথক আরেকটি পদক্ষেপে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড ও এর অন্তর্ভুক্ত ৭০টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের ‘এনটিটি লিস্টে’ যুক্ত করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন ছাড়া এই কোম্পানিটি আর মার্কিন প্রযুক্তি কিনতে পারবে না।

মার্কিন সরকারের এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মতো পর্যবেক্ষকদের। এরই মধ্যে দেশ দুটি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এবং চলতি সপ্তাহে পরস্পরের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কের কারণে তাদের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ আরো গভীর হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া চীনের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় মার্কিন ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা চীন সরকার থেকে স্বতন্ত্র স্বাধীন কোম্পানি, বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে হুয়াওয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করাতে যুক্তরাষ্ট্র আরো সুরক্ষিত বা শক্তিশালী হয়ে উঠবে না বলেও মন্তব্য করেছে কোম্পানিটি।

হুয়াওয়ের পণ্য চীন গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহার করতে পারে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে।

মিত্রদেরও হুয়াওয়ের পণ্য বাদ দিতে উদ্বুুদ্ধ করা হয়েছে। এরই জেরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতির ব্যবহার আটকে দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইমারজেন্সি ইকোনোমিক পাওয়ার অ্যাক্ট ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলে এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। এই আদেশের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরকারের অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ১৫০ দিনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। গত বুধবার ট্রাম্পের আদেশের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েসহ ৭০টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রযুক্তি ও উপকরণ সংগ্রহ করতে পারবে না।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের মুখপাত্র গেং সুহাং বলেছেন, নির্দিষ্ট চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ মর্যাদাহানিকর আর অন্যায্য। তিনি বলেন, আমরা মার্কিন পক্ষকে পূর্বনির্ধারিত নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি এবং তাদের স্বাভাবিক বিনিয়োগ আর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি যথাযথ, ন্যায্য এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিতের অনুরোধ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close