কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৬ নভেম্বর, ২০১৮

আ.লীগে একক হাছান মাহমুদ বিএনপি প্রার্থী নিয়ে দোলাচল

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন কেউ নেই রাঙ্গুনিয়ায়। অন্যদিকে বিএনপিতে প্রার্থী হতে চান যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে দ-িত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী অথবা ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

তবে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুর পর পরিবারটি এখন ইমেজ সংকটে রয়েছে। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরাও এখন দূরে সরে গেছেন। এ অবস্থায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা বিএনপির পক্ষে সহজ হবে। সে হিসেবে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের সভাপতি রোটারিয়ান জসিমউদ্দিন চৌধুরী।

স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন পার্টি থেকে রাঙ্গুনিয়ায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় পার্টি (এরশাদ), এমনকি মুসলীম লীগ থেকেও প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস আছে। ফলে, দলের হাত বদলে এখানের রাজনীতিও মিশ্র। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে একদিনে ‘কাদের চৌধুরী’ পরিবার, আরেক দিকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মেরূকরণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

স্থানীয় নির্বাচনী ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে মুসলিম লীগের টিকিটে একবার (১৯৭৯) এবং বিএনপির টিকিটে দুবার (১৯৯৬ ও ২০০১) নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটের মনোনয়নে নির্বাচিত হন কমিউনিস্ট পার্টির মোহাম্মদ ইউসুফ। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে ১৯৮৬ সালে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং ১৯৮৮ সালে নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে হারিয়ে প্রথমবার এমপি হন হাছান মাহমুদ। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-বাম জোটহীন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি হন তিনি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি হাছান মাহমুদ ছাড়া অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাননি বলে নেতাকর্মীরা জানান। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা হাছান মাহমুদ এলাকার কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদের চেষ্টায় এলাকার রাস্তাঘাটসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। আগামী নির্বাচনে হাছান মাহমুদই দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আমরা আশাবাদী। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতবে।

জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দুই মেয়াদে রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছি। পাইপলাইনে আছে আরো সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প। শুধু সরকারি টাকায় নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে এলাকার কৃষি, শিক্ষা, ধর্মীয় ও চাকরি খাতে মানুষকে সহায়তা দিয়েছি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনেও জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবে।

অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়ার বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি এখানে ভালো করবে। যদিও আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলের প্রার্থী কে হবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নেতাকর্মীরা বলেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাদ কাদের চৌধুরী বা ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এই আসনে নির্বাচন করতে চান। কোনো কারণে তাদের কেউ এ আসনে নির্বাচন না করলে সালাউদ্দিনের ভাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী এই আসন থেকে লড়তে চান। তাদের কেউ প্রার্থী না হলে বিএনপির হয়ে ভোটযুদ্ধে নামতে চান সাকা পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শওকত আলী নূর ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত।

তবে বিএনপির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের দাবি, সাকা পরিবারের সদস্যরা এখন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তারা দেশে নেই। হুম্মাম কাদের চৌধুরী এখন সিঙ্গাপুরে, সাকার আরেক ছেলে ফায়েজ কাদের চৌধুরী লন্ডনে, মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী কানাডায় এবং স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ঘুরেফিরে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিদেশে থাকছেন।

এদিকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন সাকা চৌধুরী। আর আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো এখানে মনোনয়ন দেয় ড. হাছান মাহমুদকে। তখন এলাকায় আঞ্চলিকতার বিষয়টি ওঠে আসে। কারণ সাকা চৌধুরীর বাড়ি রাঙ্গুনিয়া নয়। নির্বাচনে সাকা চৌধুরীকে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন হাছান মাহমুদ।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকার মৃত্যুদ- কার্যকরের পর ইমেজ সংকটে পড়েছে সাকা পরিবার। রাঙ্গুনিয়ার রাজনীতিতে তারা দাঁড়াতেই পারছে না। গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাছাড়া সাকা অনুসারীরা। এ অবস্থায় রাঙ্গুনিয়া আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন ব্যবসায়ী রোটারিয়ান জসিমউদ্দিন চৌধুরী। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। সক্রিয় রয়েছেন দলীয় কর্মকা-েও। বিএনপির এমন দুর্দিনে তার এই সোচ্চার থাকার বিষয়টি হাইকমান্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদান দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। ইতোমধ্যে তিনি কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

জানতে চাইলে জসিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ আছে। তাদের সমর্থন নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close