রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী রেশম কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু
বন্ধ করে দেওয়ার ১৬ বছর পর পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে ফিরল রাজশাহী রেশম কারখানা। গতকাল শুক্রবার থেকে কারখানার পাঁচটি লুমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকালে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করা যায়নি। দীর্ঘদিন পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলো। ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পকে ঘিরে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল রাজশাহীর মানুষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কারখানাটি চালুর পেছনে শ্রমিকদেরও অবদান আছে। তাদের আন্তরিকতা ছাড়া এটা চালু করা সম্ভব হতো না। আমরা রেশম কারখানাটিকে পূর্ণাঙ্গভাবেই চালু করতে চাই। এ শিল্পকে সামাজিক শিল্পে রূপ দিতে চাই। ঘরে ঘরে রেশম সুতা তৈরি হবে, মানুষ কারখানায় গিয়ে সুতা বিক্রি করে আয় করবেÑ আমরা এমন স্বপ্ন দেখি। এটা সম্ভব।’
বাদশা বলেন, ‘লোকসানের অজুহাতে বিএনপি সরকার দেশের অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা কারখানাগুলোকে লাভজনক করে তোলার উপায় খোঁজেনি। আমরা বেসরকারীকরণের হাত থেকে এই কারখানাকে রক্ষা করেছি। এখন গ্যাস দিয়ে কারখানা চালাতে চাই। এতে উৎপাদন ব্যয় ৩০ ভাগ কমে যাবে। তখন রেশম কারখানা একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, হঠাৎ এক দিন রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হলো। এতে রাজশাহীতে হাহাকার শুরু হয়। শ্রমিকদের কেউ কেউ হার্টফেল করে মারা যান। চাষিদের মন ভেঙে গেল। তারা পলুচাষ বন্ধ করে দিলেন। এভাবে রাজশাহীর রেশমশিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেল।
মহাপরিচালক বলেন, রাজশাহী রেশম কারখানায় প্রতি বছর গড়ে ১ কোটি টাকা লোকসান হতো। সরকার কত খাতেই তো ভর্তুকি দেয়। কারখানার এই লোকসান বহন করা সরকারের জন্য খুব বেশি কঠিন ছিল না। কারখানায় এই ভর্তুকিটা দিলে আজ এই রেশমের মাধ্যমেই সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেণী, অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন ও রেশম বোর্ডের সদস্য ড. সাবরিনা নাজ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলীসহ রেশম চাষি, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা কারখানায় রেশম সুতা ও কাপড় উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরে দেখেন। পাঁচটি লুম ছাড়াও থুইরিং, রিলিং এবং ওয়ার্কিং মেশিন চলতে দেখে তারা উচ্ছ্বসিত হন।
সর্বশেষ ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি এভাবে রেশম কাপড় উৎপাদন করেছিল। বন্ধ করে দেওয়ার দিন কারখানার ৩০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। রেশম বোর্ড জানিয়েছে, বন্ধ ঘোষণার সময় রেশম কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলত পুরনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে ১ রলাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করত। কারখানায় ৬৩টি লুম চালু করা গেলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে ২ লাখ ৮৭ হাজার মিটার।
"