নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিকল্পনামাফিক কাজ না হওয়ায় উন্নয়ন যথাযথ হচ্ছে না
‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ : পরিকল্পনাবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে পরিকল্পনামাফিক কাজ না হওয়ার কারণে উন্নয়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা নেয়া হলেও রাজনৈতিক কারণে তা বাধার মুখে পড়ছে। আবার অনেক সময় জনগণের সঙ্গে আলোচনা ছাড়ায় ঘরে বসে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এতে কার্যকর কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিকল্পনাবিদদের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও খুলনা ইউনিভার্সিটি প্ল্যানার্স অ্যালামনাই (কুপা) যৌথ উদ্যোগে বিআইপি মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। বিআইপির সভাপতি প্রফেসর ড. এ কে এম আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও কুপার সভাপতি এস এম মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় আরো বক্তৃতা করেন ইউএনডিপির জাতীয় নগর দারিদ্র্য হ্রাস প্রকল্পের ম্যানেজার জন টেইলর, বিআইপির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ, নগর উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক, বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিলুর রহমান খান, রাজউকের ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, কুপার সদস্য তামান্না বিনতে রহমান, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক গোলাম রহমান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপির সাসটেইনেবল রিনিউয়েবল এনার্জি পাওয়ার জেনারেশন প্রজেক্টের ম্যানেজার ড. তাইবুর রহমান।
আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, দেশে পরিকল্পনামাফিক কাজ না হওয়ার কারণে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পরিকল্পনার সমন্বয় করতে না পারলে যে তিমিরে আছি সে তিমিরেই থেকে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশে আমদানির তুলনায় রফতানির পরিমাণ খুবই কম। বিশেষ করে উন্নয়ন কর্মকান্ডের যন্ত্রপাতি আমদানি করার কারণে বৈষম্য বেড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা বিক্রি করে পার্থক্য কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজী হাসান বলেন, বিদেশে আমাদের প্রায় ১ কোটি জনশক্তি রয়েছে। যারা আমাদের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এসব জনশক্তির বেশিরভাগই অদক্ষ। আমরা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরো বাড়বে। তিনি আরো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে। এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে না পারলে তা টিকসই হবে না। শহরের পাশাপাশি গ্রামের দিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে হবে।
জন টেইলর বলেন, সরকার ও জনগণের মধ্যে আন্তঃসংযোগ না থাকলে কোনো উন্নয়ন কাজই টেকসই করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদরা সরকার ও জনগণের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে।
আকতার মাহমুদ বলেন, আমরা একটি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হতে যাচ্ছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের যে শর্ত পূরণ হওয়ার কথা সেগুলো যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের সরকারি সম্পত্তিগুলো বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে চলে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো রক্ষা করা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ছে কিন্তু এটা শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক হলে হবে না, দেশের জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে হবে। ঢাকায় বসে যে চিন্তা করা হচ্ছে প্রান্তিক এলাকার কর্তা ব্যক্তিরাও সে চিন্তা করছে কিনা তা দেখতে হবে।
ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক বলেন, দেশের ৬ দশমিক ৭০ ভাগ এলাকা বর্তমানে পরিকল্পনার আওতায় এসেছে। ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলা শহর নিয়ে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে রাজনৈতিকভাবে বাধার মুখে পড়তে হয়। কারণ রাজনীতিবিদরাই শহরের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, দেশে পরিকল্পনা বিষয়ে কোনো আইনই নেই। জেলা-উপজেলায় কোনো পরিকল্পনাবিদও নেই। এজন্য বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লোক নিয়োগের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আইন তৈরির কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনাবিদরা দেশের উন্নয়নে অনুঘটকের কাজ করতে পারে। তারা দেখিয়ে দেবে কোথায় কী হবে, কীভাবে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তা বাস্তবায়ন করবে।
ড. আদিলুর রহমান খান, দেশে পরিকল্পনা করা হয় বাজেট দেখে, মানুষ দেখে নয়। যে পরিকল্পনায় মানুষ থাকে না, সেই পরিকল্পনাই কখনোই সুফল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন রাজনীতিবিদরা নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্ত তারা কতটুকু করবেন তার মাত্রা ঠিক করা উচিত। এলাকাভিত্তিক বাজেটের ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে হবে। ব্রিফকেস পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
"