দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্বখ্যাত টেবিল মাউন্টেন বা টেবিলের মতো পর্বত, আফ্রিকান পেঙ্গুইন, সাগর ও রোদের উজ্জ্বলতার শহর হিসেবে পরিচিত। আর এসব কারণেই বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রের মধ্যে এটিও একটি। কিন্তু খুব সহসাই এ শহরটির ‘বিখ্যাত’ হয়ে উঠতে পারে; আর আর সেটি হলো সম্ভবত কেপটাউনই হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম পানিহীন শহরে। এই ভয়াবহ পানি সংকটের মধ্যে জীবন কেমন চলছেÑতার একটি বিবরণ পাওয়া যায় বিবিসির প্রতিনিধির একটি কথায়। তা হলো ‘আমার স্ত্রী এখন আর গোসলই করেন না’।

সাম্প্রতিক উপাত্তগুলো আভাস দিচ্ছে যে মার্চের শুরুতেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে কেপটাউনের অধিবাসীরা কিংবা ভ্রমণরত পর্যটকরা। এ সংকট বা সমস্যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, গত তিন বছরে ইতিহাসের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে সেখানে। অন্যদিকে দিনে দিনে শহরটিতে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। শহরের প্রায় চল্লিশ লাখ অধিবাসীকে সংরক্ষণ করা পানি ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, তা-ও আবার দিনে কোনোভাবে ৮৭ লিটারের বেশি নয়। খাবার, গোসল, টয়লেট কিংবা আনুষঙ্গিক সব দরকারের জন্যই এটুকু বরাদ্দ। গাড়ি ধোয়া বা সুইমিং পুলে পানি রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেপটাউনেই বসবাস করেন বিবিসির মোহাম্মেদ আলী। এই ভয়াবহ পানি সংকটের মধ্যে জীবন কেমন চলছেÑতার একটি বিবরণ দিয়েছেন তিনি নিজেই। ‘আমার স্ত্রী এখন আর শাওয়ার নেন না। তিনি দেড় লিটারের মতো পানি ফুটিয়ে তার সঙ্গে এক লিটারের মতো টেপ ওয়াটার মিশিয়ে তার ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার করেন। আবার একবার ব্যবহৃত পানি আমরা সংরক্ষণ করি টয়লেটে ব্যবহারের জন্য।’

তিনি জানান, কেপটাউনের অন্য অধিবাসীদের মতোই তার পরিবারের চার সদস্যও সংরক্ষণ করা পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সন্তানরা গোসল সারে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে।

তীব্র খরার সময় পানি ব্যবহারের সীমা ৫০ লিটারে নামিয়ে আনে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সব প্রচেষ্টা আসলে ডে-জিরোকে বিলম্বিত করা। ডে-জিরোর নির্ধারণ হয়ে আছে ১২ এপ্রিল, যেদিন কেপটাউনের পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। কিন্তু ৫০ লিটার পানি ব্যবহার মাত্র-এটি সত্যিই কঠিন সেখানকার মানুষের জন্য, কারণ সাধারণত একবার শাওয়ার বা গোসলের সময় প্রতি মিনিটে দরকার হয় ১৫ লিটার পানি। কিংবা টয়লেটে ফ্ল্যাশে প্রতিবার দরকার হয় ১৫ লিটারের মতো পানি। পানি সংকটে মানুষ যেমন অভ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি এ নিয়ে ক্ষোভও বাড়ছে কেপটাউনের অধিবাসীদের মধ্যে।

"