ক্রীড়া ডেস্ক
তিন বিভাগেই দুর্দান্ত সাকিব
তবু হলেন না ম্যাচ সেরা
সাত বছর ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। ইডেন গার্ডেন্সের প্রতিটি ইট-বালুর কণা চেনে তাকে। প্রিয় সেই চত্বরে সাকিব আল হাসান ফিরলেন শত্রুবেশে, কলকাতার প্রতিপক্ষ হিসেবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে। স্বাভাবিকভাবেই আবেগ ছুঁয়ে গেছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। কিন্তু সেটা ম্যাচের আগে। পেশাদারিত্বে যে আবেগ দেখানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে অধিনায়ক বাইশ গজে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটিকে।
পরশু সাকিবের অলরাউন্ডিং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে কলকাতাকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে চলমান আইপিএলের তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে হায়দরাবাদ। সাকিবের দারুণ বোলিংয়ের সুবাদে কলকাতাকে ১৩৮ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলেছে অরেঞ্জ আর্মিরা। এই রান তাড়া করতে গিয়ে ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন সাকিব। করেছেন ২১ বলে ২৭ রান, দলীয় ৫৩ রানে ৩ উইকেট পতনের পর অধিনায়ক উইলিয়ামসনের (৫০) সঙ্গে ম্যাচজয়ী জুটি ৫৯ রানের জুটি গড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
কুড়ি ওভারের একটা ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হতে সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন সাকিব। চার ওভারে ২১ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট। ব্যাট হাতে খেলেছেন মাঝারিমানের ইনিংস। ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব। সবমিলিয়ে কলকাতার বিপক্ষে জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তিনি। সেই সাকিবকেই দেওয়া হলো না ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি!
আইপিএল অ্যাডজুটিকেটরা সবাইকে চমকে দিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা তুলে দিয়েছেন বিলি স্ট্যানলেককে। বল হাতে সাকিবের মতো একই পারফরম্যান্স করেছেন (৪-০-২১-২)। হায়দরাবাদের জয়ে তার অবদান ওই পর্যন্তই। ব্যাট ধরার সুযোগ পাননি তিনি। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন তিনে ব্যাটিংয়ে নামা নীতিশ রানা ও আন্দ্রে রাসেলের। কিন্তু পুরো ম্যাচের বিচারে তার চেয়ে সাকিবের পারফরম্যান্স অনেক বেশি কার্যকর ছিল। বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন সাকিব।
কিন্তু ম্যাচসেরা যারা নির্বাচন করেন তারা সাকিবের এত অল্পে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাদের বিবেচনায় ম্যাচসেরা স্ট্যানলেক! অথচ এই ম্যাচের প্রতিবেদনে ‘ক্রিকইনফো’র শিরোনামেই পরিষ্কার ম্যাচসেরা আসলে কেÑ ‘সাবেক নাইট রাইডার সাকিবের নেতৃত্বে কলকাতায় সানরাইজার্সের প্রথম জয়।’
এমনকি এই ম্যাচে পরিসংখ্যানের সাকিবকেও তোয়াক্কা করেননি ম্যাচসেরা নির্বাচকরা। আইপিএলের ইতিহাসে মাত্র সপ্তম খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে পঁচিশোর্ধ্ব রান, ন্যূনতম ২ উইকেট আর ২টি ক্যাচ নিয়েছেন সাকিব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিন্তু এই ম্যাচের ‘নায়ক’ বাংলাদেশের অধিনায়ক। অর্থাৎ স্কোরকার্ডে না হোক সাকিব অন্তত সমর্থকদের চোখে ঠিকই ম্যাচসেরা।
প্রতিপক্ষ সাকিবের এমন পারফরম্যান্সে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারল কলকাতা, কমলা শিবির পেল টানা তৃতীয় জয়। পরশু এই ম্যাচের পর নাইট শিবিরজুড়েই থাকল হতাশা। কলকাতার গণমাধ্যমগুলো তো সাকিবকে নিয়ে এক প্রকার হাহাকারই করল। আনন্দবাজার, এবেলা, এই সময়সহ বেশ কয়েকটা গণমাধ্যম কলকাতায় সাকিবের শূন্যতাটা ভালোভাবেই তুলে ধরেছে। সাকিবের সঙ্গে প্রাক্তন নাইট ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, মনীষ পান্ডে এবং ঋদ্ধিমান সাহাদের ছেড়ে দেওয়া যে কলকাতার ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না প্রতিবেদনগুলোতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
"